দ্বীপজেলা ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে করে প্রথমে আনা হবে রাজধানী ঢাকায়। তারপর ভিন্ন একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে নেওয়া হবে খুলনায়। ভোলা-বরিশাল-খুলনা আগের পরিকল্পনা সংশোধন করে নতুন এই পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এরই মধ্যে ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ। শিগগির শুরু হচ্ছে বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। এরই মধ্যে বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ভোলার গ্যাস আগে আমরা ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ জন্য ভোলা থেকে একটি পাইপলাইন বরিশাল হয়ে ঢাকায় আসবে। পরে বরিশাল-খুলনা পাইপলাইন নিয়ে কাজ হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় গ্যাসের চাহিদা বেশি। কারণ এখানে শিল্পকারখানা অনেক বেশি। তাই ভোলার গ্যাস ঢাকায় আনাটা জরুরি। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের
কাজ শেষ উল্লেখ করে জ্বালানি সচিব বলেন, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব করে। ৯৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পাইপলাইনের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে, শুধু বরিশাল পর্যন্ত সংযোগ দিয়ে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত ১০৯ কিলোমিটার পাইপলাইন করার পরিকল্পনা করা হয়। পুরো প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা; কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে জ্বালানি বিভাগ। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুমোদন দেয় জ্বালানি বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হলেও বরিশাল-খুলনা পাইপলাইন বাতিল করা হয়নি। ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন হওয়ার পর খুলনার পাইপলাইন করা হবে। কারণ এখন ঢাকায় গ্যাসের প্রয়োজন বেশি। খুলনাতে আপাতত না দিলেও হবে। জানা গেছে, ভোলার গ্যাস প্রথমে পাইপলাইনে করে বরিশালে আসবে। তারপর বরিশাল থেকে পাইপলাইনে ঢাকার আমিনবাজারে এসে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
স্থলভাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র, সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের পর ভোলাতেই এখন পর্যন্ত বড় গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে যতগুলো কূপ খনন করা হয়েছে, সবই গ্যাসের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোলা ইস্ট থেকে ভোলা নর্থের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার সেখানে গ্যাস পাওয়া গেছে। বিবিয়ানার পর এটা হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় রিজার্ভ। এরই মধ্যে ভোলায় দুটি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। তাতে প্রায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুতের আশা করা হচ্ছে। গ্যাসফিল্ড দুটিতে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যা দিয়ে দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে, যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্ল্যান্ট রেডি হচ্ছে। ভোলায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাপেক্স।
ওই এলাকায় গ্যাসের চাহিদা না থাকায় দৈনিক মাত্র ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। বিগত সরকার সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট আনার জন্য একটি কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। কোম্পানিটি দৈনিক সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে গাজীপুর এলাকার কয়েকটি কারখানায়।
অন্যদিকে, ভোলা থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি আকারে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়ে ডিপিপি তৈরি করছে পেট্রোবাংলা। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুত ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। এখন ১ হাজার ৯০০ মিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুত ফুরিয়ে আসছে। দেশীয় উৎসের ৫০ শতাংশ জোগান আসছে ওই গ্যাসফিল্ডটি থেকে। এক সময় ১৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হলেও ৪ মার্চ পাওয়া গেছে মাত্র ৯৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাসক্ষেত্রটির মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। শঙ্কা সত্যি হলে রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দিতে পারে।