রাজধানীর মিরপুর থেকে হারিয়ে যাওয়ার আড়াই বছর পর পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিন্না গ্রামে বৃদ্ধ মাকে খুঁজে পেয়েছেন তার সন্তানরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে।
বুধবার বিন্না গ্রামে মায়ের সঙ্গে সন্তানদের দেখা হওয়ার সময় সেখানে আবেগঘন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানরা। এক পরিবারের মহামিলনের এই মুহূর্তের সাক্ষীরা নিজেরাও ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি।
প্রায় ৬৫ বছরের বয়সী অজুফা বেগম থাকতেন রাজধানীর মিরপুরে তার ছেলের সঙ্গে। আড়াই বছর আগে সেখান থেকেই হঠাৎ একদিন হারিয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন অজুফা। তখন থেকে তার দুই ছেলে দুলাল মিয়া, হানিফ মিয়া এবং মেয়ে নাজমা তার সন্ধান করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না।
মাঝের সময়টাতে মাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য সবই করেছেন তার সন্তানরা। এরই মধ্যে এক মাস আগে পিরোজপুরের বিন্না বাজারে তাকে ঘুরতে দেখে স্থানীয়রা ইউপি সদস্য বাবুল মেম্বারকে জানান। তিনি ১নং বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে ইউনিয়ন পরিষদের ত্রাণ তহবিল থেকে চাল দিয়ে একটি বাড়িতে তার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং অন্যান্য খরচ পরিচালনা করতে থাকেন।
গত ২১ নভেম্বর ওই গ্রামের আলী হায়দার মল্লিক আব্দুল্লাহ নামক এক এনজিও কর্মী সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আরিফুর রহমান আরিফের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে আরিফুর রহমান অজুফার ছবি ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি, নিজের পেইজে, শতাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট গ্রুপে ছড়িয়ে দেন।
এর সূত্র ধরে অজুফা বেগমের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার চর বেতাল গ্রামের কয়েকজন যোগাযোগ করেন আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তারপরে তারা ছেলে দুলালকে জানান গত ২২ নভেম্বর। তারপরে অজুফা বেগমের সন্তানরা পৌঁছান বিন্না গ্রামে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান বলেন, আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে আড়াই বছর পর ছেলে ও মেয়ে তার মাকে ফিরে পেয়েছে, তাতে আমার অনেক আনন্দ লাগছে। মা সন্তান জীবিত থেকেও দেখা করতে না পারার এই বিচ্ছেদ যেন যুগ যুগ অতিক্রম না করে, তাই আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাপক পরিসরে প্রচার করি। অবশেষে আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
অজুফা বেগমের ছেলে দুলাল মিয়া বলেন, কোনোদিন ভাবিনি আমার মাকে দেখতে পাবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। দুলাল মিয়ার বোন নাজমা বেগম জানান, আমি সব সময় বলতাম একদিন আমার মা ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার মাকে অ্যাডভোকেট আরিফ স্যারের কল্যাণে ফিরে পেয়েছি।