যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জব্দ করা সম্পদের একটি অংশ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব সম্পদ বিক্রি করে তার দায়দেনা পরিশোধ করা হবে। সোমবার ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) চৌধুরীর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেওয়ার পর তার ব্যবসার পতন ঘটে। জব্দের তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে রয়েছে উত্তর লন্ডনের সেন্ট জনস উডে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিলাসবহুল সম্পত্তি এবং মধ্য লন্ডনের ফিটজরোভিয়ায় এক ব্লক ফ্ল্যাট।
ঢাকার বর্তমান সরকারের অনুরোধে এনসিএ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। অবশ্য তিনি বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার। তিনি বারবার বলেছেন, তার বিদেশি সম্পত্তি কেনার জন্য বৈধ তহবিল ব্যবহার করেছেন।
এখন গ্রান্ট থর্নটনের প্রশাসকদের চৌধুরীর সম্পদের একটি বড় অংশ বিক্রি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার বেশিরভাগই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্বে ভাড়া দিয়ে রাখা আবাসন ব্লক।
গত সপ্তাহে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরও ৩টি কোম্পানি। লন্ডনভিত্তিক রিয়েল এস্টেট সংবাদমাধ্যম বিজনাও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিগুলোকে অধিগ্রহণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।
৮ আগস্ট এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এই ৩টি কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ৩শ কোটি)। গত ২৯ জুলাই এগুলোর দায়িত্ব নেয় প্রশাসনিক সংস্থা।
খবরে বলা হয়, প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া ৩টি কোম্পানি হলো- জেডটিএস প্রপার্টিজ লিমিটেড, রুখমিলা প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেড। কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে আর্থিক সংস্থা গ্রান্ট থর্নটনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যারা এর আগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আরও ৩টি কোম্পানির দায়িত্ব পেয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক নথি থেকে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে মোট ৭৮ মিলিয়ন পাউন্ড ঋণী। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংক জেডটিএসের মালিকানাধীন একাধিক সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ দিয়েছে। এসব ঋণ মূলত লন্ডনের ফ্ল্যাটকে জামানত রেখে নেওয়া হয়েছিল।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আরও একটি মামলা হয়। ৭ আগস্ট দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে এই মামলা করেন। জানা গেছে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার স্বজনকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী-বোনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।