বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসিত করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগই নয় তার অপসারণ চেয়ে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষর অপসারণের দাবীতে শহরজুরে দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়েছেন পোস্টার।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ আগষ্ট আওয়ামীলীগের আস্তাভাজন হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ ফয়জুল বাশার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তৎকালিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামীলীগ নেতা ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনের বদলীতে ডা. ফয়জুল বাশার এ পদে স্থলাভিসিক্ত হন। যোগদানের পর থেকেই তিনি আওয়ামীলীগ ঘরোনার ডাক্তারদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আলোচনায় আসেন। তবে তার এই স্বজনপ্রিতিতে অন্যান্য মতাদর্শী অনেক ডাক্তার এ মেডিকেল কলেজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এসব কারনে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষা-সেবা কার্যক্রম। শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে মেডিকেল কলেজ। পড়াশুনার উপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে শিক্ষকের দাবীতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। একইসাথে আওয়ামীলীগকে পূনর্বাসিত করার অভিযোগে অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশারের পদত্যাগ দাবী করেন শিক্ষার্থীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সাটানো হয় পোষ্টার। অধ্যক্ষর পদত্যাগ ও শুন্যকোটায় শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। বেশ কয়েকদিনের টানা আন্দোলনেও দাবী পুরন না হওয়াও এক পর্যায় কলেজ শাটডাউন ঘোষনা করে মুল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরফলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সমাল দিতে বেশ কয়েক ডাক্তারকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে বদলী করা হয়। তবে বদলী হননি অধ্যক্ষ। প্রশ্ন উঠে যোগদানকৃত ডাক্তারদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনের ফলে যেসকল ডাক্তারদের এই মেডিকেল কলেজে পদায়ন করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই স্বৈরাচারী আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শের। ওইসব শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার আন্দোলন দমাতে শিক্ষক পদায়নের নামে এ মেডিকেল কলেজে আওয়ামীলীগকে পূনর্বাসিত করতে চাচ্ছেন। কেননা তিনি নিজেই আওযামীলীগ শাষনামলে দলীয় বিবেচনায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেছেন। ওই শিক্ষার্থীরা আরও জানান, দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ন পদে পরিবর্তন আসলেও বরিশালে এর কোন প্রভাব দেখা যায়নি। এখনও এখানকার প্রশাসন চলছে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের দিয়ে। যা জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে প্রতারনা বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষার্থী।
এদিকে কলেজ সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ৭৫ টি বিভাগের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৭৪ জনার মত। তা আবার সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সদ্যযোগদানকৃতদের কারনে এ সংখ্যা দারিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারজন রয়েছেন অধ্যাপক।
সম্প্রতি যোগদানকৃত ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে অধিকাংশই প্রভাষক। শিক্ষক সংকোটের এই অবস্থার উন্নতীর দায়িত্ব অধ্যক্ষর উপর থাকলেও তিনি তা ব্যার্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাবের বরিশাল সভাপতি ডাঃ নজরুল ইসলাম সেলিম জানান, ৫ আগষ্টের সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটলেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে এর কোন প্রভাব পড়েনি। এখনও এ কলেজ চলছে আওয়ামী দোসরদের নিয়ন্ত্রনে। এখানকার শিক্ষকরা এখনও পর্যন্ত হচ্ছে বৈষম্যর শিকার। শুধু তাই নয় আওয়ামীলীগ শাষনামলে যোগদান করা স্বাচিব সদস্য বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ ফয়জুল বাশার এর নির্দেশে নামিয়ে ফেলা হয় ড্যাবের কোরআন প্রতিযোগীতার ব্যানার। সম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বেশ কিছু শিক্ষককে বরিশাল মেডিকেলে পদায়ন করলেও তার অধিকাংশ আওয়ামী ঘরোনার। অথচ যারা গত ১৬/১৭ বছর আওয়ামীলীগ সরকারের দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন সেইসকল শিক্ষকরা এখনও এ কলেজে ফিরতে পারেননি। এমনকি তাদের আসতে দেয়া হচ্ছেনা।
সমন্বয়কের নামে কয়েক ছাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দুই একজনার যোগসাজসে অধ্যক্ষর এসব কাজে সহায়তা করছে বলে তাদের কাছে অভিযোগ আসছে জানিয়ে ড্যাবের এই সভাপতি আরও বলেন, বৈষম্যর শিকার শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই যোগ্যতা সম্পন্ন। তাদের ফিরিয়ে না এনে বাহির থেকে শিক্ষক আনাটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি।