বৃহস্পতিবার, ০৬:০৩ অপরাহ্ন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কে এই সুশীলা কার্কি?

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

জেনারেশন-জেডের টানা বিক্ষোভের মুখে কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও একাধিক ঐতিহাসিক রায়ের কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত।

বিক্ষোভকারীদের পছন্দের প্রার্থী কার্কি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

গত জুলাইয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্কি বলেছিলেন, ‘তিনি এখনো বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যায়ে কাটানো সময়ের স্মৃতি মনে করে আবেগাপ্লুত হন। সেখানে তিনি শুধু পড়াশোনাই করেননি, নাচ শেখার সুযোগও পেয়েছিলেন।‘

নেপালের একাধিক সূত্র জানায়, বুধবার জেন-জি বিক্ষোভকারীদের নেতারা সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

জেন-জিরা কীভাবে কার্কিকে বেছে নিলেন-

গতকাল বুধবার নেপালের জেন-জিবিক্ষোভকারীরা নতুন সরকারের সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেন এবং তাদের বেশিরভাগ সুশীলা কার্কির পক্ষেই সমর্থন জানান বলে জানা গেছে।

জেন-জি নেত্রী রক্ষা বাম দেশটির সাংবাদিক ভদ্র শর্মাকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করেছি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজই এ প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, প্রথমে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহকে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন জেন-জি আন্দোলনকারীরা। তবে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ইতোবাচক সাড়া দেননি।

সাহসী বিচারক হিসেবে কারকির খ্যাতি-

২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কার্কি। সততা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক বিচারক হিসেবে অল্প দিনের মধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।

প্রসঙ্গত, সুশীলা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এরপর ১৯৭৯ সালে বীরাটনগরে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাজীবনের শুরু হয় তার। পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন তিনি।

উল্লেখ্য, দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক কাউন্সিল সুশীলা কার্কিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময় কার্কি বেশ কিছু ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন, যা তাকে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত করে তোলে। দুর্নীতির দায়ে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী জয়া প্রকাশ গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। নেপালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন কোনো মন্ত্রীকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ছিল এটি।

তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিতর্কিত নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি নারীদের সন্তানের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার সম্পর্কিত প্রগতিশীল রায়ও দিয়েছিলেন তিনি।

তবে, ২০১৭ সালে কিছু রায়ের কারণে সরকারের বিরাগভাজণে পরিণত হন তিনি। সেই সময় ক্ষমতাসীন জোট দেশটির পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে।

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, এই অভিশংসন প্রস্তাবে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিরোধের কারণে তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com