পূর্বশত্রুতার জের এবং সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক সাবেক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলশী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম আনসার চৌধুরী (৬০)। আনসার ওই গ্রামের আলাউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে। অবসরের পর থেকে তিনি গ্রামেই ছিলেন।
থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী নওশের আলীর সঙ্গে কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোখলেসুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।মোখলেসুর রহমানের পক্ষের শফিক মোল্লা কয়েক দিন আগে নিজামকান্দি বাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে টিনের দোকানঘর নির্মাণ করেন। দোকানঘরটি সরকারি জায়গায় তোলা হয়েছে দাবি করে চেয়ারম্যান নওশের আলীর কাছে কয়েকজন মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান চেয়ারম্যান। সম্প্রতি ইউএনওর নির্দেশে ইউনিয়নের তহসিলদার সেখানে গিয়ে দেখেন, দোকানঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি জায়গায়। তিনি ঘরটি ভাঙার জন্য ঘরের মালিক শফিক মোল্লাকে জানান। মোখলেসুর ও তাঁর পক্ষের লোকজন এতে ক্ষিপ্ত হন। তাঁদের ধারণা, নওশের আলী ষড়যন্ত্র করে তাঁদের দোকানঘর ভাঙার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়কে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার রাত থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। আজ সকালে দুই পক্ষ লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়াও হয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টায় আনসার চৌধুরী মারা যান।আহত অন্যরা হলেন, ইউপি সদস্য বাবুল শেখ (৩৫), আলী ফকির (৪৫), আজিজ মোল্লা (৪০), বিপ্লব মোল্লা (৪০) ও ফুল মিয়া মোল্লা (৫৫)।
ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নওশের আলী বলেন, এলাকার শফিক মোল্লা সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করেছেন। তিনি ঘটনাটি ইউএনওকে জানালে তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। আজ সকালে প্রতিপক্ষের লোকজন আবার দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ করেন।
এ বিষয় জানতে মোখলেসুর রহমানকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর পক্ষের সবুর মোল্লা বলেন, ‘আজ আনসার চৌধুরীর মৃত্যু হলো। এর আগেও দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে একাধিকবার লোকজন নিহত হয়েছেন। এভাবে আর কত লোকের জীবন দিতে হবে? এর শেষ কোথায়? আমরা শান্তি চাই।’কাশিয়ানীর রামদিয়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আইয়ূব আলী মোল্যা বলেন, নিজামকান্দি বাজারে যে দোকানঘর নির্মাণ নিয়ে সংর্ঘের ঘটনা ঘটে, সেটা সরকারি সম্পত্তির ওপর করা হয়েছে। শিগগিরই ওই দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। দুদিন আগে লাল রং দিয়ে তাঁরা তিনটি ঘর চিহ্নিত করে এসেছেন।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার খবর পেয়ে রামদিয়া ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে হতাহতের ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি।
এ জাতীয় আরো খবর..