জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ব্যাপক সমর্থনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাস হয়েছে। শুক্রবার নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভোটে ১৪২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ বিরত থাকেন। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। এতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদার করার পাশাপাশি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। হামাসকে গাজার শাসন থেকে সরে গিয়ে অস্ত্র হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরব লিগও প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গত জুলাইয়ে ১৭টি দেশ এটিতে স্বাক্ষর করেছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গাজার যুদ্ধ বন্ধ করা জরুরি এবং হামাসকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা ও অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।
ইসরায়েল এই সমর্থনকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, সাধারণ পরিষদ ‘বাস্তবতার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে’।
ফিলিস্তিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল–শেখ প্রস্তাব পাসকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ মাসে ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহে গাজা শহরের অধিকাংশ এলাকা দখলের লক্ষ্য নিয়ে তীব্র অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা, যার ফলে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েল অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে দখলকৃত এলাকায় ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথ সংকীর্ণ করতে পারে।
নেতানিয়াহু বলেন, “কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না—এটি আমরা নিশ্চিত করব।” তার অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি, যারা এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।