মাদারীপুরের শিবচরে প্রচণ্ড খড়ায় ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ। পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাটচাষিরা। খালে-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মারাত্মক অসুবিধায় পড়েছেন কৃষকেরা।
বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা ও পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে খরচ বেশি হওয়াসহ পাটের গুণগত মান কমছে। পাটের সোনালী রঙ নষ্ট হয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে।
শিবচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ ও পাঁচ শ’ হেক্টর জমিতে মেস্তা-কেনাফ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ ও ৫১০ হেক্টর জমিতে মেস্তা-কেনাফ আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, শিবচরে এ বছর ২৬ হাজার ৫৪৬ হাজার মেট্রিক টন পাট ও ৯৬৯ মেট্রিক টন মেস্তা-কেনাফ উৎপাদিত হবে।
গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার পাটচাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। শিবচরের পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।
শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকেরা দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপজেলার নদী, পুকুর, খাল, বিল, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষকেরা পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন।
তবে পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো-ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের জিতু মাদবর নামের এক কৃষক জানান, ‘এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে, এখনো কোথাও পর্যাপ্ত পানি নেই। বানের পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
কাদিরপুর ইউনিয়নের মিঠু সরদার নামের আরেক কৃষক জানান, ‘পাট চাষে কোনো লাভ নেই। অনেক খরচে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বপন, সেচ দেয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়, তা হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান বেরিয়ে আসে।
আসান মোড়ল নামের অন্য এক কৃষক বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে, এখনো খালে বিলে কোথায়ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বন্যার পানির আশায় আছি। খালের কম পানিতে পাট জাগ দেয়ার ফলে পাটের আঁশ কালো হয় বলে তা কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘পাট চাষ এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। মাঠে পাটের অবস্থাও ভালো। এখন পাট কাটার সময় চলছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কৃষক পাট নিয়ে হতাশায় পড়েছে। এছাড়া জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকায় পাটগাছ শুকিয়েও যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ না হলে খাল-বিলে পানি জমবে না। বর্তমান পাটের বাজারমূল্য যা আছে তাতে চাষিদের লোকসান হবে না। তবে দাম কমে গেলে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।’