ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। অন্য বছর নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রভাব কমে এলেও এ বছর এখনো কমেনি ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। তবে আগামী দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। একই সাথে ডেঙ্গু সারা বছর থাকতে পারে বলেও অভিমত তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া গতকালের তথ্য মতে, চলতি বছরের গত সাড়ে ১১ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০ হাজার ৭৫৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৬৭ জন। এ সময় মারা গেছেন তিনজন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪৬৪ জন ঢাকার এবং ঢাকার বাইরে ৩০৩ জন। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে দুই হাজার ৭২৯ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে এক হাজার ৫২৮ জন। বাকি এক হাজার ২০১ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫০ হাজার ৭৫৯ জন রোগীর মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৮১৪ জন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, নগরায়ণের চিত্র পরিবর্তন হওয়ায় ডেঙ্গুর বিস্তারও বেড়েছে। এখন মশার বিস্তার শুধুমাত্র বর্ষাকালের বৃষ্টির কারণেই হচ্ছে না। বহুতল ভবন নির্মাণ, গাড়ির পার্কিংয়ে পানি জমে থাকা, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবন নির্মাণে ধীরগতির কারণে অনেক দিন পানি জমে থাকা ইত্যাদি কারণে এখন সারা বছরই ডেঙ্গু থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এ বছর নভেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রভাব রয়েছে। তবে এখন থেকে কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, অন্য বছর এ সময়ে দ্রুত ডেঙ্গু কমলেও এ বছর কমবে ধীরে ধীরে। সামনের দিনগুলোতে আস্তে আস্তে ডেঙ্গু কমে আসবে। তবে পুরোপুরি ডেঙ্গুমুক্ত হবে না।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস গতকাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখছি। কীটপতঙ্গের বা এডিস মশার বিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি এবং সময়সীমার পরিবর্তন দেখছি। এ সম্পর্কে আমাদের পূর্বাভাস পাওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, এবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব অক্টোবর ছাড়িয়ে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় চলমান রয়েছে। এত দিন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থাকার কথা ছিল না। এখন আমরা শুষ্ক মৌসুমে চলে এসেছি। কিন্তু তারপরও আমরা এডিস মশার বিস্তার লক্ষ করছি। ফলে এডিস মশা নিধনের জন্য, নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কাজ চলমান রাখতে হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ড এলাকার মধ্যে মাত্র ৩৭ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। সে জন্য আমরা মনে করি যে, এটা আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও আমরা লক্ষ করছি-এটা বাংলাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে এটার প্রাদুর্ভাব এখন আরো বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৌসুমের পরেও এডিস এবং মৌসুমের আগে কিউলেক্স মশার বিস্তার হওয়ার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের আরো কার্যকর গবেষণা করা প্রয়োজন এবং এ ধরনের গবেষণায় সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সে জন্য যদি কোনো বরাদ্দ প্রয়োজন হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তা দিতেও প্রস্তুত আছে। কারণ আমরা ঢাকাবাসীকে মশক নিয়ন্ত্রণের সুফল পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।