শনিবার, ০১:৩৫ অপরাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন। পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছে। পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির আওতায় জাতিসংঘের সহযোগিতায় ২০০৭ সালে ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭’ নামে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে প্রস্তাবিত ওই খসড়ার ওপর অসংখ্য সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে শেষ পর্যন্ত আর স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার অবশেষে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে।

গত ২৮ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ঐকমত্য হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশের আইনানুগভাবে ও প্রভাবমুক্ত হয়ে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা, পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের উত্থাপিত অভিযোগ এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে ঐকমত্য হয় সভায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাংবিধানিক হিসেবে নয়, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা হচ্ছে। স্বাধীন পুলিশ কমিশন কোনো পুলিশ সদস্যের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করবে। পুলিশের কাজে বেআইনি প্রভাব বা হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা প্রদানে নির্দেশনা দেবে। এ ছাড়া পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হবেন এ কমিশনের চেয়ারম্যান। যার বয়স ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয়। সদস্য সচিব হবেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে থাকবেন সংসদ নেতার একজন প্রতিনিধি, বিরোধীদলীয় নেতার একজন প্রতিনিধি, জাতীয় সংসদের স্পিকারের একজন প্রতিনিধি, ডেপুটি স্পিকারের (বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত) একজন প্রতিনিধি, সচিব পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, জেলা জজ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং একজন মানবাধিকারকর্মী। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ন্যূনতম দুজন নারী থাকবেন।

কমিশনের চেয়ারম্যানসহ কিছু সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি থাকবে। সে কমিটির সদস্য হবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি।

সূত্র জানায়, স্বাধীন পুলিশ কমিশন পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করবে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি দিতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে সার্বিক কর্মকা- পরিচালনায় স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন জরুরি। তবে শুধু গঠন করলেই হবে না, কীভাবে পরিচালিত হবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারা এই কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী- তার একটি সমন্বিত রূপ থাকতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম কিংবা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের সম্পৃক্ততা বহুবিধ। মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রক্রিয়ায় এটা দেখতে হবে। সেখানে পুলিশের কার্যক্রম বা আইন প্রয়োগের সঙ্গে আরও যেসব পেশার ব্যক্তিরা জড়িত তাদের পুুলিশ কমিশনে সমন্বিত করতে পারলে ফলাফল আসবে।

তিনি আরও বলেন, কমিশন গঠন হলো কিন্তু ঠিকমতো কাজ করতে পারল না, তাহলো তো কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হলো। এ জন্য কমিশন গঠন এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও বেশি আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের জন্যই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ সংস্কারের অংশ হিসেবে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করেনি। ফলে এই কমিশন আলোর মুখ দেখেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের পদোন্নতি, পদায়ন, বদলি, নিয়োগ, পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অবৈধ অর্থ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়। ফলে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারির বড় ধরনের ক্ষতি হয়। যার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় গত বছর জুলাই-আগস্টে। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ হতাহত হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনী জনগণের আস্থা হারায়। বিপর্যয় নেমে আসে পুরো বাহিনীতে। যে কারণে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশ বাহিনী সংস্কারের দাবি আসে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকেও স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে জোরালো প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com