বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় চিকিৎসকদের অর্ধেক পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগের দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেটি পাত্তা দিচ্ছে না। এতে ক্ষোভ জন্মেছে চিকিৎসক নেতাদের মনে। সেবা গ্রহীতারাও আছে বিপাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে কাগজে-কলমে শয্যা এক হাজার হলেও দৈনিক দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকছেন। বহির্বিভাগে সেবা নেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। অথচ ওই হিসেবে চিকিৎসক নেই।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ৫২৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ২৯৮ জন। পদ শূন্য ২২৮টি। হাসপাতালে প্রায়ই রোগীদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরাও স্বীকার করেছেন এ কথা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না। তাই হাসপাতালে আসা রোগীদের সেবা দান ব্যাহত হয়।
ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্কট দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও পাওয়া যায় না। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছাড়া এ হাসপাতালে আসা সেবা গ্রহীতাদের আর কোনো ভরসার জায়গা নেই।
শেবাচিমের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদগুলো পূরণ করতে পারলে চলমান সঙ্কট নিরসন হবে। এছাড়া হাসপাতালের মেডিক্যাল কর্মকর্তাদের পদগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে সমস্যা হবে না।
বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ২৮১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। আছে মাত্র ৬৮৮ জন। পদ ফাঁকা ৫৯৩টি। তাই সেবার মান ঠিক নেই। দীর্ঘদিনের ভোগান্তিতে কষ্ট হচ্ছে রোগীদের। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে বরিশালে বিভাগে মোট ১২৫টি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
বরিশালের স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ জেলায় ৭৮০ জন চিকিৎসকের জায়গায় সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৪৬৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩১৫। পটুয়াখালীতে ২৫৯ জনের জায়গায় আছে মাত্র ১১৮ জন চিকিৎসক। শূন্য পদের সংখ্যা ১৪১। ভোলায় ২৪৭ চিকিৎসকের জায়গায় আছেন ১২৯ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১১৮। পিরোজপুরে ১৯২টি চিকিৎসক পদের জায়গায় শূন্য পদের সংখ্যা ৭৭। দায়িত্ব পালন করেন মাত্র ১১৫ জন চিকিৎসক। বরগুনা জেলায় ১৮৬ চিকিৎসকের জায়গায় কাজ করেন ৮৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১০১। ঝালকাঠি জেলায় ১৪৩ জনের স্থলে শূন্য পদের সংখ্যা ৬৯। কাজ করেন মাত্র ৭৪ জন চিকিৎসক।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. জি এম নাজিমুল হক বলেন, হাসপাতালগুলোয় মিড লেভেলের চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দেন। তাদের ক্রাইসিস দীর্ঘদিন ধরে রয়ে গেছে। এ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে এখনই চিন্তা করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল শাখার আজীবন সদস্য ডা. প্রদীপ কুমার বণিক বলেন, একজন চিকিৎসক দিয়ে চারজন চিকিৎসকের কাজ করানো সম্ভব নয়। দ্রুত জনবল বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানিয়েছেন, অধিদফতর থেকে শিগগিরই জেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিকিৎসক সমন্বয় করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।