আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চলতি আসরের প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আজ। মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সামনে টানা তৃতীয়বার আইসিসির ইভেন্টে ফাইনালে ওঠার হাতছানি। অন্যদিকে অজিদের সামনে ১৬ বছরের দুঃখ ঘোচানোর সুযোগ।
এবারের আসরে ‘এ’ গ্রুগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের সব কটিতেই জয় পায় রোহিত শর্মার দল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারায় ভারতীয়রা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের জয় ৪৪ রানে। সবশেষ পরশু কিউইদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তারা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৯ রান তোলে ভারত। এই রান তাড়া করতে নেমে ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দুই দলের লড়াইয়ে একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল এই ম্যাচে যেন জিততে চায় না কেউ! এ যেন অস্ট্রেলিয়াকে এড়ানোর কৌশল। শেষ অবধি অজিদের বেছে নিল ভারতীয়রা।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এবারের আসরে দলের সেরা বোলার জসপ্রিত বুমরাহকে পায়নি ভারত। চোট নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান তিনি। বুমরাহর বদলি হিসেবে ভারতীয় দলে ঢুকে পড়েন বরুন চক্রবর্তী। সুযোগ পেয়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ রানে নেন ৫ উইকেট। সমান রান খরচায় সমান উইকেট পেয়েছিলেন কিউই পেসার ম্যাট হেনরিও। যদিও তা বিফলে গেছে।
এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েই তা কাজে লাগিয়েছেন বরুন। হার্শিত রানার জায়গায় একাদশে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনালের আগে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছেন বরুন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বরুন নাকি হার্শিত কে খেলবেন এ নিয়ে দ্বিধায় আছে ভারত। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও তা স্বীকার করেছেন অধিনায়ক রোহিত। তিনি বলেছেন, ‘বরুন অন্য ধরনের বোলার। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম সে কেমন বল করে। খুবই ভালো বল করেছে সে। সে নিজের মতো করে বোলিং করলে তাকে খেলা খুব কঠিন। পরের ম্যাচের জন্য একাদশ সাজাতে আমাদের বাড়তি সময় দিতে হবে।’
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ভারত। এবার এক রাউন্ড আগেই দেখা হচ্ছে তাদের। ম্যাচটা ভারতীয়দের জন্য প্রতিশোধের উপলক্ষ বটে। এবার ফল নিজেদের অনুকূলে রাখতে চান অধিনায়ক রোহিত। তার ভাষায়, ‘আইসিসি ইভেন্টে অস্ট্রেলিয়া সব সময় ভালো খেলে। খুব ভালো ম্যাচ হবে। আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করতে হবে। আশা করি এবার ফল আমাদের পক্ষে যাবে।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ দুটি ফাইনালে খেলেছে ভারত। গত আসরের ফাইনালে তো চিরশত্রু পাকিস্তানের কাছে ১৮০ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। আগের আসরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা আরও খারাপ। এবার শিরোপা জিততে মরিয়া অজিরা। আসরে তাদের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া রানের পাহাড় ডিঙিয়ে অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয় রেকর্ড জয়। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে মাঠে নামতে পারেনি দলটি। বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় স্টিভেন স্মিথের দলকে। চার পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হতে হয় তাদের।
ভারতকে পেয়ে এবারও বেশ সতর্ক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা এক দল ভারত। গত ৮-১০ বছর ধরে আইসিসি ইভেন্টে সেরা চারে জায়গা করে নেয় তারা। এবার গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে রোহিতের দল। এমন দলের বিপক্ষে সাফল্য পেতে হলে সেরা ক্রিকেট খেলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আমি আশাবাদী সতীর্থরা তাদের সেরাটা উজাড় করে দেবে এবং ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করবে।’
ওয়ানডে সংস্করণে মুখোমুখি লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। ১৫১ ম্যাচে তাদের জয় ৮৪টিতে। বিপরীতে ভারত জয় পেয়েছে ৫৭ ম্যাচে। ১০টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে দেড় দশকেরও বেশি সময় পর দেখা হচ্ছে তাদের। শেষবার ২০০৯ সালে এই টুর্নামেন্টে পরস্পরকে মোকাবিলা করেছিল। সেই ম্যাচে ভারতকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপপর্বের সেই ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেস্তে গিয়েছিল। ভারতও বিদায় নিয়েছিল গ্রুপপর্ব থেকে।