স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী \ গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনে জাপা ও গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সহ মেয়র পদে চারজন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে বুধবার জমা দিয়েছেন। এছাড়াও এদিন পর্যন্ত সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৯১ জন ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার পক্ষে এ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নামে আরো একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে স্থাপিত নির্বাচনের রিটানিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র দুটি সংগ্রহ করা হয়।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনে অংশ নিতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থীতার জন্য ১৩জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও এদিন পর্যন্ত সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৪০ জন ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৯৮ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৪জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৯১ জন ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন সহ মোট ২৫৯জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র এ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন।
বুধবার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে যে চার প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা হলেন- জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ কমিটির সাবেক সদস্য ও ৩৫ নং ওয়ার্ডের দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ হারুন অর রশীদ ।
এদিকে সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পান নি। ফলে নির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার বিষয়টি এ পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ধূয়াশাচ্ছন্ন। বুধবার তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি মুহুর্তেই মহানগরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এটি পরিনত হয় ‘টক অব দ্য টাউনে’। তার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করায় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ফিরে প্রাণচাঞ্চল্য। বিষয়টি নিয়ে তার কমর্ী-সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। নতুন করে নির্বাচনের হিসেব নিকেশ করতে শুরু করেছেন নগর বাসী। তিনি এ নির্বাচনে অংশ নিলে মেয়র পদের নির্বাচন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মেয়র হিসেবে তিন বছরে মহানগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। যা এ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মহানগরের জনগণের আমার প্রতি বিপুল সমর্থন রয়েছে। তাদের ভালোবাসা ও আগ্রহের কারণে আমি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আশাকরি গত নির্বাচনের মতো এবারও জনগণ বিপুল ভোটে আমাকে বিজয়ী করবেন। এ সময় তিনি মহানগরের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।
অপর দিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্ণিং অফিসারের কার্যালয় মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসময় দলের নেতা কর্মীসহ তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও শাশুড়ি উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়ন জমা প্রদানের পর এমএম নিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি আশা করি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণের বিপুল ভোটে আমি নির্বাচনে জয় লাভ করব।
এসময় তিনি বলেন, বিগত অনেক নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। অনেক নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অনিহা সৃষ্টি হয়েছে। আমি প্রত্যাশা করি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। একই সঙ্গে সরকারের এখানে ভ্থমিকা থাকতে হবে, যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।
জাপা প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া উপলক্ষে রিটার্ণিং অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার মিয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য বাবু পবন চন্দ্র ঘোষ, শেখ মাসুদুল আলম টিটু, মহানগর জাতীয় পার্টিও প্রচার সম্পাদক সালাম মোল্লাসহ দলের বহু নেতাকর্মী উপস্থিত হন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, বুধবার পর্যন্ত মেয়র পদে ১৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এড, মো. আজমত উল্লা খান, ইসলামী আন্দোলন- বাংলাদেশ এর প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির প্রার্থী মোঃ রাজু আহম্মেদ সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম, আবুল হোসেন, মোকলেছুর রহমান, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন পত্র এদিন পর্যন্ত জমা পড়ে নি।
তিনি আরো জানান, গত ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়ার শেষ সময় হলো ২৭ এপ্রিল। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল এবং প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮মে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭২১জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ জন এবং হিজড়া ১৮ জন।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
২৬/০৪/২০২৩ ইং।