মঙ্গলবার, ০৪:১৬ অপরাহ্ন, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

দল গোছানোর কাজে ইতি টানতে চায় বিএনপি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমনটি মাথায় রেখে নানামুখী তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠন গোছানোর কার্যক্রমে ইতি টানতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে এখন জেলা-মহানগর তথা তৃণমূলে হচ্ছে সম্মেলন। এসব সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকছেন। সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এসব সম্মেলনের সার্বিক তদারকি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। চলতি আগস্ট এবং আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ১০টি জেলায় সম্মেলন হওয়ার কথা জানিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর। এরই মধ্যে গত রোববার রাজশাহী মহানগরে ও গতকাল সোমবার নওগাঁ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গত শনিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কাউন্সিলকে রোল মডেল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কেননা, উৎসবমুখর পরিবেশে ড্যাবের চিকিৎসকরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করেছেন। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এভাবে কমিটি গঠন গণতন্ত্র চর্চার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। অবশ্য কোনো কোনো জায়গায় পতিত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগীদের বিএনপির কমিটিতে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দল শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তারা বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন। এসব কর্মসূচিতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরাও। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চাইছেন নির্বাচনের আগেই দল গোছানোর কার্যক্রম শেষ করতে। কেননা, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে নতুনভাবে দল গোছানোর বিকল্প নেই। তৃণমূলে বিএনপিকে পুনর্গঠন ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিলে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সেজন্য বিএনপির হাইকমান্ড চায় আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই সারা দেশে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে।

ড্যাবের নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক পরিচর্যার অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি গতকাল কালবেলাকে বলেন, চিকিৎসকদের সংগঠনের মধ্যে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম। গত শনিবার ড্যাবের কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন কমিটি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি মনে করি, নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের কমিটি গঠন গণতন্ত্র পরিচর্যার অংশ। বিএনপি প্রত্যেকের মতপ্রকাশ্যে বিশ্বাসী। জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখবে। ড্যাবের নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ডা. রফিকুল ইসলাম।

জানা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক জেলা শাখা ৮২টি। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এর মধ্যে মাত্র ২০টি শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। বেশ কয়েকটির আবার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি। অন্তত অর্ধশত শাখায় সম্মেলন হয়নি। আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির মূল শক্তি দুটি সহযোগী ও ৯টি অঙ্গসংগঠন। তবে এগুলোর সাংগঠনিক অবস্থাও বেহাল। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল গঠনতান্ত্রিকভাবে বিএনপির সহযোগী সংগঠন। আর অঙ্গসংগঠন হিসেবে রয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, জাসাস ও মহিলা দল। এসব সংগঠনের মধ্যে কয়েকটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও বেশিরভাগের মেয়াদ নেই। সবচেয়ে করুণ দশা মৎস্যজীবী দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল ও জাসাসের। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে অধিকাংশ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘ সময়েও জেলা শাখা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় মাঠপর্যায়ের অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মী দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। অনেকে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী অনেক হাইব্রিড নেতা দলে ভিড়তে তৎপরতা বাড়িয়েছেন।

জানা যায়, ৬০-৯০ দিনের ভেতরে সারা দেশে তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। সে হিসেবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সময় শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি বিএনপি।

জানা গেছে, সারা দেশে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সিলেট বিভাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বরিশাল বিভাগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রংপুর বিভাগে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম বিভাগে অন্য ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, এখনো অনেক জেলায় সম্মেলন বাকি। এর মধ্যে ঢাকা, সিলেট, খুলনা, ফরিদপুর ও রংপুর বিভাগের বেশকিছু জেলা-মহানগরে সম্মেলন হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা জেলা সম্মেলন হয়নি বহুদিন। ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধানী। একইভাবে রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় কাউন্সিল হয়নি। উল্লিখিত বিভাগের বিভিন্ন জেলায় চলতি মাসেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আগামী ২০ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলা, ৩০ আগস্ট নেত্রকোনা জেলা, ১৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, আমরা সংগঠন গোছানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচি থাকায় সময়মতো দল গোছানোর কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগগির মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরে কমিটি গঠন করা হবে।

সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে তৃণমূলে কমিটি হালনাগাদ এবং জেলা পর্যায়ে কাউন্সিলের বিভিন্ন কাজ থাকে, সেগুলো শেষ করতে হয়। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে প্রায় সব কাজ গুছিয়ে এনেছি। চলতি আগস্ট মাসে এবং আগামী মাসের মধ্যে সিলেট বিভাগের সব জেলায় কাউন্সিল শেষ করার পরিকল্পনা আছে। আশা করছি শেষ করতে পারব।

এদিকে, দীর্ঘ ১৫ বছর পর গতকাল নওগাঁ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হলে সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল। অতঃপর গত ২৪ জুলাই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের এক সভায় ১১ আগস্ট নওগাঁ জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ১৬ বছর পর গত শনিবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৯ সালে মহানগর বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। শনিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা থাকলেও ভোটাভুটি হয়নি। রাতেই সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুল হক (মন্টু) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়কারী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের নির্দেশে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com