ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচি আজ ১১ জানুয়ারি পালিত হবে। মাঠের প্রধান বিরোধী এই দলটির কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচির রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন ভালোভাবে নিচ্ছে না শাসক দল। ইতোমধ্যে হামলা, মামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও বিএনপি তাদের কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ জন্য গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। ওই নির্দেশনার আলোকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করার পাশাপাশি সমাবেশ করবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি বরাবরই সরকার পতন আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছে। এখন তারা ২৭ দফা ঘোষণা করেছে। সেখানেও সরকারের পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে। একটা নির্বাচিত সরকার বিএনপির কথায় পদত্যাগ করতে পারে না। নেতাদের মতে, গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান। এই উন্নয়ন বিএনপি ও তাদের মিত্রদের ভালো লাগছে না। তারা নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার হটাতে চায়। গত ১০ ডিসেম্বর তাদের সেই চিন্তা ছিল। তারা সফল হতে পারেনি। আগামীতে সরকার হটানোর জন্য তারা নানা পরিকল্পনা করবে এটাই মনে করা হচ্ছে। এ জন্য কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যাতে জ্বালাও পোড়াও না করতে পারে সে জন্য নেতাকর্মীরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগও রাজপথ দখলে রাখবে, যাতে বিএনপি ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে সাথে সাথে প্রতিহত করা যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ শাহআলী থানার চিড়িয়াখানা রোডের ঈদগাহ মাঠে আজ বেলা ৩টায় ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শান্তি সমাবেশ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপি দেশব্যাপী নৈরাজ্য চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে সরকারকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল; কিন্তু সে দিন তারা সফল হয়নি। আগামীতে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, কর্মসূচির নামে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে সে জন্য আমরা রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে থাকব। তারা যদি কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও সহিংসতা করতে চায় আমরা প্রতিরোধ করব, প্রতিহত করব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ প্রথম শান্তি সমাবেশ ঘোষণা করেছিল। গতকাল সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সকাল ১০টায় এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আলোচনা উপলক্ষে নেতাকর্মীরা সেখানে সতর্ক অবস্থান করবেন। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মিরাজ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির গণ-অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপি কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের নাশকতা-নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাথে সাথেই প্রতিরোধ করবে। তবে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে আওয়ামী লীগ বাধা দেবে না।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা বেলা ১১টায় রাজধানীর ফার্মগেটে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে। ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন- আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো: মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ছাত্রলীগ অবস্থান করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগসহ বিভিন্ন পয়েন্টে। এ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা সরকার হটানোর জন্য ষড়যন্ত্র করলে আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। আগের মতোই বিএনপির গণ-অবস্থানকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচি মানে জ্বালাও পোড়াও অগ্নি সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা ভাঙচুর। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য তাদের এই নৈরাজ্য ঠেকানো ও প্রতিহত করা সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর তো গেল, আওয়ামী লীগ কি মোকাবেলা করেনি? আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, যেকোনো ধরনের আন্দোলনের নামে সহিংসতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, তবে আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব। আমরা কাউকে আক্রমণ করব না। আক্রান্ত হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী জবাব দেবে, প্রশাসন জবাব দেবে নাকি পার্টি দেবে- সেটি সময়ই বলে দেবে।