কেবল চোখ দেখেই নির্ণয় করা যায় কোনো কোনো রোগ। চোখের সাদা অংশ লাল হলে, পানি পড়লে, প্রদাহ হলে তার নাম চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগ। এই রোগে আমাদের চোখের পাতার নিচে ঝিল্লির মতো পাতলা পর্দা , যা চোখের সাদা অংশ ও চক্ষুপল্লবের ভেতর ভাগ ঢেকে রাখে। রোগটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আর তাদের থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ চোখ ওঠা রোগটি হলো ভীষণ ছোঁয়াচে রোগ। শীতকালে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও এ রোগ আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই এ জন্য নিতে হয় বাড়তি সতর্কতা।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ : চোখ উঠলে রোগীর কনজাংটিভা লাল অথবা টকটকে লাল দেখাবে। এটি এক চোখে কিংবা দুই চোখেই হতে পারে। সাধারণত প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। চোখ উঠলে রোগীর চোখ চুলকাবে। জ্বালাপোড়া বা খচখচে ভাব হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে চোখের ভেতরে কিছু আটকে আছে এমন মনে হতে পারে। চোখ থেকে বারবার পানি পড়বে। চোখের পাতায় পুঁজ জমবে, যা পাপড়িতে আঠার মতো লেগে থাকবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখা যাবে চোখের পাতা দুটো জোড়া লেগে আছে। চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চোখের পাতা লাল হয়ে ফুলে চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসবে।
উপসর্গ : চোখের সাদা অংশ লাল হয়। চোখের পাতা ফুলে যায়। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখে জ্বালাপোড়া করে। চোখে হলুদ, সাদা রঙের ময়লা জমে। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের দুপাতা একসঙ্গে লেগে থাকে। হালকা জ্বর ও মাথাব্যথা হয়।
জীবাণু ছড়ায় যেভাবে : চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হয়। অপরিষ্কার হাত, আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে, আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, গামছা ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে। অ্যালার্জি ধুলাবালির মাধ্যমে। চোখের কসমেটিকস ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে।
চিকিৎসা : যেসব কারণে চোখ ওঠে, তা থেকে দূরে থাকতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতা খোলা রাখতে হবে। চোখে কালো চশমা পরতে পারেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হবে।
যখন চিকিৎসা নেবেন : চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা পদার্থ বের হয়। চোখে ব্যথা। চোখে ঝাপসা দেখতে পেলে বা দেখতে সমস্যা হলে। রোদে গেলে কিংবা কোনো অ্যালার্জিক বস্তুতে চোখে সমস্যা হলে। চোখের সাদা অংশ ফুলে উঠলে। লাল হলে।
যা করবেন না : চোখের চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া চোখের ড্রপ ও ওষুধ মোটেও ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
প্রতিকার : রোগটি ছোঁয়াচে বলে পরিবারের একজন থেকে অন্যজনে হয়। কাপড়, তোয়ালে ও অন্যান্য জিনিস আলাদা আলাদা করে ব্যবহার করুন। পরিবারের অন্যদের ব্যবহারের পরামর্শ দিন। আর চোখে হাত দেওয়া যাবে না।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা