বৃহস্পতিবার, ০৭:২৬ অপরাহ্ন, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৮, আহত ৭৭ চট্টগ্রামে তৈরি ৩ ল্যান্ডিং ক্রাফট যাচ্ছে আমিরাতে গৌরনদীতে করিম প্রফেসার এর মৃত্যুতে বনিক সমিতির শোক প্রকাশ দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের নেতা মিলন’র ইন্তেকাল  রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা: ট্রাইব্যুনালে হট্টগোল শেখ হাসিনাকে দেশে আনতে যে পথে হাঁটছে সরকার আরাকান আর্মির হাতে বন্দী ১৬৬ জেলে, ‘মাছ শিকারে গেছে, আজও ফিরে এল না’ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান ডাকসুর ‎দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ, মোশাররফের ‎বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বিচারকের ছেলে হত্যায় লিমন মিয়া দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে

রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা: ট্রাইব্যুনালে হট্টগোল

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর মামলায় রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা তর্কবিতর্ক চলে, যা আদালতকক্ষে হট্টগোলের পরিবেশ তৈরি করে।

জেরা চলাকালে তর্কে দুই পক্ষ, ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ ঘটনা ঘটে। প্যানেলের অন্য সদস্য ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার পর আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী আবজালুল হকের জেরা শুরু হয়।

জেরার একপর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থানার কোনো পুলিশ সদস্য মারা গেছেন কিনা। জবাবে সাক্ষী বলেন, “না, তবে একজন মারা গেছেন। তিনি অন্য ইউনিটের ছিলেন এবং সে মামলার তদন্তে আমি ছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি।”

এই প্রশ্নে প্রসিকিউশন আপত্তি জানালে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক শুরু হয়, যা দীর্ঘসময় ধরে চলে। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে নতুন প্রতিক্রিয়া, তথ্য গোপনের অভিযোগও উঠেছে

এর আগের দিন (বুধবার) ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আবজালুল। রাজসাক্ষী হিসেবে পুরো সত্য জানানোর কথা থাকলেও তার বক্তব্যে অনেক তথ্য উঠে না আসায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। যদিও প্রসিকিউশন দাবি করেছে, তিনি নিজের জানা সব তথ্যই দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সাক্ষী ডায়াসে উঠে পরিচয় দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। মাত্র পঞ্চাশ মিনিটেই তার জবানবন্দি শেষ হয়।

তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট থানার সামনে লাশ পোড়ানোর ঘটনা নিজে প্রত্যক্ষ করেননি। ১৫ আগস্ট থানায় অস্ত্র ও গুলি জমা দিতে গেলে সহকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শোনেন। তার মতে, ওইদিন লাশ পুড়িয়েছিলেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ। সাক্ষ্যের শেষে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাও চান।

আসামিদের জবানবন্দি ও রাজসাক্ষীর স্বীকারোক্তি

চলতি বছরের ২১ আগস্ট ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। সেই সময় উপস্থিত ৮ আসামির মধ্যে ৭ জন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। আদালত তার আবেদন গ্রহণ করে দোষ স্বীকারোক্তির অংশ রেকর্ড করেন।

১৮ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে তা অনুষ্ঠিত হয়নি। ১২ নভেম্বরও একই কারণে সাক্ষী হাজির হয়নি। ৫ নভেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব সাক্ষ্য দেন। তার চোখের সামনে একজন গুলিতে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ২৯ অক্টোবর জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান, যিনি চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থানার ওসির নির্দেশে রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার ও হস্তান্তরের কথা জানান।

প্রথম দিকের সাক্ষ্য ও মামলার পটভূমি

১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমদিনের সাক্ষ্যে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান ঘটনার বর্ণনা দেন। এর আগে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার ওই নৃশংস হামলার বিবরণ তুলে ধরেন।

২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন, যেখানে ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৬২ সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে আদালত ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন।

গ্রেপ্তার আটজন ও পলাতকদের তালিকা

এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৮ আসামি হলেন—

ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী

সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম

পরিদর্শক আরাফাত হোসেন

এসআই মালেক

এসআই আরাফাত উদ্দিন

এএসআই কামরুল হাসান

এসআই আবজাল

কনস্টেবল মুকুল

তবে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক।

হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ ঘটনা

গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সাভার এলাকায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে পুলিশ ভ্যানে করে তাদের লাশ নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ঘটনার সময় ছয়জনের একজন জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেওয়া হয়নি—পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

এই নির্মম ঘটনার পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com