মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হাতে বন্দী এখনও ১৬৬ জেলে। গত ১১ মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমারে নাফ নদসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। সবশেষ বুধবার (১৯ নভেম্বর) সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে ফেরার পথে দুটি ট্রলারসহ ১৬ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে তারা। বিজিবি বলছে, কয়েক দফায় ২০০ জনকে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।
বন্দী এক জেলের স্ত্রী মনিরা খাতুন বলেন, ‘টাকা রোজগারের জন্য স্বামী মাছ শিকারে গেছে, কিন্তু আজও ফিরে এল না। তিনি কি মারা গেছে, নাকি জীবিত আছে; জানি না।’ কারণ তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এক মাস পরেও তাদের ফেরত দেয়নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
মনিরা প্রতিদিন স্বামী ফিরে আসার প্রতীক্ষায় বসে থাকেন ঘরের দরজায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দেখাশুনা করার কেউ নেই, ওরা দ্রুত না ফিরলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমার সন্তানদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে, ওদের বাবা একমাত্র আয়ের মাধ্যম।’
এদিকে, মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক জানায়, গত ২৮ অক্টোবর আরাকান আর্মির উপকূলীয় নিরাপত্তা ইউনিট সমুদ্রপথে টহল জোরদার করে। টহলের সময় আরাকান রাজ্যের জলসীমা অতিক্রম করে মাছ ধরতে থাকা কয়েকটি বাংলাদেশি ট্রলার শনাক্ত করা হয়। সেখানে তারা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৮৮ জন বাংলাদেশি জেলে ও ৩০টি নৌকা আটক করে পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আইন অমান্য করায় ফের এসব ট্রলার ধরা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া গত বুধবার ১৬ জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করে।
টেকনাফ পৌরসভাস্থল কায়ুকখালী ঘাট বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ বলেন, ‘আরাকান আর্মি ধাওয়া করে ট্রলারসহ আমাদের জেলেদেরকে ধরে নিয়ে যায়। এই যদি অবস্থা হয় আমরা কিভাবে সংসার চালাব। এর আগেও ট্রলারসহ প্রায় ২০০ জন মাঝিমল্লারকে আরকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি, আপনারা একটু জেলেদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান। এখন ভয়ে কেউ মাছ ধরতে যাচ্ছে না। এ নিয়ে জেলেদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ‘আরাকান আর্মির কারণে নাফ নদ ও সাগরে মাছ ধরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখন আমাদের জেলেদের পরিবারের মধ্যে হাহাকার ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে সাগরে ও নদীতে কেউ মাছ ধরতে যাচ্ছে না। মিয়ানমারে আরাকান আর্মির হাতে প্রায় ২০০ জনের মতো জেলে বন্দী রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ যত তাড়াতাড়ি পারেন আমাদের জেলেদেরকে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ট্রলারসহ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে এবং অতি শিগগির জেলেদেরকে ফেরত আনার আলাপ- আলোচনা চালাচ্ছে। এবং আমরা প্রতিনিয়ত জেলেদেরকে সচেতনামূলক অনেক সভাও করেছি, যাতে তারা মিয়ানমারের সীমানায় গিয়ে মাছ না ধরে।’
বিজিবি বলছে, গত ১১ মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩৫০ জেলেকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় তাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়। এখনও ১৫০ জেলে আরাকান আর্মির হাতে রয়েছে। যার ফলে অনেক জেলে সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছে।