আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাম দলগুলো। বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন জোট ও দল মিলে এক মঞ্চে আসার আলোচনা জোড়ালোভাবে চলছে বলে দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে। উদ্দেশ্য শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত দিনগুলোতে বিরোধীর ভূমিকায় তেমন কাউকে দেখা যায়নি। গণতন্ত্রের প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী বিরোধী মোর্চা বা দল থাকা জরুরি। ইতোমধ্যে বেশ কজন নেতা এই জোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানে পরাস্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা বাম দলগুলো বাদ দিয়ে নতুন নামে এই জোট আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া দলগতভাবেও নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে দেখা যাচ্ছে বাম দলগুলোকে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের থাকবেই। আমরা দলগত ও জোটগতভাবে নির্বাচনের চিন্তুা করছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট তো আছেই। সেইসঙ্গে আরও শক্তি নিয়ে বিকল্প জোট গড়ে তোলার চেষ্টা আমাদের আছে। এখন আমরা চাইব- নির্বাচন কমিশন সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
নতুন জোটের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব বাম দল নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট করার। কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পর জোটের কাঠামো দাঁড়াবে। এই জোটে ড. কামাল হোসেন থাকবেন। মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি- ওনাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও বাম জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ- সবাই মিলে এই জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, বিএনপি পাওয়ার পার্টি হলে একটি শক্তিশালী বিরোধীর ভূমিকা থাকা দরকার। আমরা সেখানে ভূমিকা রাখতে চাই। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের জোট করার পরের চিন্তা। জোটের নাম কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন নাম হবে। গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট, ঐক্য ফ্রন্ট প্রভৃতি নামে হতে পারে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব নির্বাচনী পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, ফ্যাসিবাদী কাঠামো পরিবর্তনের লড়াই এবং উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার অবসানে জেএসডি দীর্ঘদিন যাবৎ রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে- এটাই স্বাভাবিক। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী কৌশল প্রশ্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেএসডি আগামী ২৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যকর কমিটির সভা আহ্বান করেছে। সভায় দেশের অভ্যন্তরীণ এবং ভূরাজনীতির পর্যালোচনা বাইরেও নির্বাচন এবং নির্বাচনী জোট গঠনসহ কতিপয় সিদ্ধান্ত নেবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদু রহমান মান্না বলেন, আমরা সেভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি এখনও শুরু করিনি। শনিবার জোটের (গণতন্ত্রমঞ্চ) একটা বৈঠক রয়েছে। ওইদিন তারেক রহমানের সঙ্গেও জোটগতভাবে অনলাইন বৈঠক রয়েছে। ওখানে এজেন্ডা যে নির্বাচন, তা নয়। তবে জোট থেকে কেউ নির্বাচনী আলাপ করতেই পারেন। মূলত তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন) কী বলেন তা শোনার পর বলতে পারব। আর সবাইতো নিজেদের মতো করে ভাবছে।
মান্না বলেন, বিএনপির সঙ্গে এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। তা ছাড়া তারেক রহমান নিজ থেকেই বলেছেন নির্বাচনের পর সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবেন। এ নিয়ে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও সবাই মনে করেছি আইডিয়াটা তো ভালোই। সে হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্য বা চিন্তা আমাদের আছে। এই কথাটা আমি সবার সঙ্গে কথা বলে বলছি না। আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দিক থেকে এক ধরনের চিন্তা আছে- সম্ভাব্য নির্বাচনী অঞ্চল, নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি। আগামী ২২ ও ২৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং আছে। মিটিংয়ে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। ঢাকা ৮-এ আমাকে প্রার্থী হিসেবে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও সম্ভাব্য নির্বাচনী অঞ্চলগুলোতে ২০০৮ ও ২০১৮-তে যেসব অঞ্চলে অংশ নিয়েছিলাম তার অধিকাংশ জায়গায় আমরা নির্বাচন করব বলে ভাবছি।
তিনি জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোও নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে; জনসংযোগ করছে। তবে মঞ্চের অংশ হয়ে নির্বাচন করা নিয়ে এখনও বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। শনিবার গণতন্ত্রমঞ্চ দুপুরে বসবে, ওইদিন সন্ধ্যায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যে শক্তিটা ছিল নির্বাচনেও সে ঐক্য থাকতে পারে- এটাই স্বাভাবিক। সে লক্ষ্যেও আলোচনা হবে। বিএনপির দিক থেকে তাগিদ আছে। আবার মঞ্চের জায়গা থেকে আগ্রহও আছে। আশা করছি বিএনপির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও ৯ তারিখে সৌজন্যমূলক আলোচনা। এই বৈঠকে হয়তো এত ডিটেইলস আলোচনা হবে না।
দলগত ও জোটগতভাবে সারাদেশে প্রার্থী বাছাই চলছে বলে জানান গণ-সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আমরা দল ও জোটগতভাবে ৩০০ আসনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা যদি আরও বৃহত্তর জোট করি তাহলে আমাদের সমঝোতা করতে হবে। আমরা সব জায়গাতেই আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। নির্ভর করবে ভবিষ্যতে কাদের সঙ্গে আমরা জোট করছি তার ওপরে। বিএনপির সঙ্গে জোট হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা তো একটা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। সেটা এখনও ভেঙ্গে যায়নি। তিনি জানান, ৯ তারিখ বিএনপি আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। সেখানে নানা আলোচনা হতে পারে।