তিন দফা দাবিতে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এর আগে গতকাল বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন।প্ল্যাটফর্মটির সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু আজকের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।তবে বুয়েটে বৃহস্পতিবার এমনিতেই সাপ্তাহিক বন্ধ।
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচির ব্যাপারে বুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, এই পুলিশ জুলাইয়ের আগের পুলিশ। এই পুলিশের মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘৃণ্য অপকর্ম করেছে পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের নাম, পরিচয়সহ তার সঙ্গে হওয়া অন্যায় ও পুলিশের হামলার বিস্তারিত বিবরণসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীদের ডেটাবেজ তৈরি করে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির মাধ্যমে যথাযথ স্থানে পৌঁছানোর অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশি হামলার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রচার করার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, পুলিশকে অবশ্যই এই হামলার জবাবদিহি করতে হবে। যদি জবাবদিহি না করে, তাহলে আমরা ধরে নেব এই পুলিশ পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসেক্ষে ঘোষণা করা হবে।
এদিকে বুধবার রাতে শাহবাগে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
উল্লেখ্য, তিন দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।একপর্যায়ে তারা বেলা দেড়টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে শুরু করেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তখন লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশের লাঠিপেটার পর তারা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবারও শাহবাগে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার পর তারা শাহবাগ মোড় ছেড়ে যেতে থাকেন। গতকাল রাতেই শাহবাগে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ আজ বিকেল পাঁচটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাউন্সিল হলে সভা হবে বলে জানান। ওই সময় বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ ঘোষণা করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো- নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা; দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গতকালই একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।