মঙ্গলবার, ১২:০৬ অপরাহ্ন, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ আজ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন আজ মঙ্গলবার বহুল আকাক্সিক্ষত জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করবেন তিনি।

এ উপলক্ষে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। এই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা হবে।

এ ছাড়া সারাদেশ থেকে সরকারি উদ্যোগে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্পেশাল ড্রোন ড্রামার আয়োজন করা হয়েছে, যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অনুষ্ঠান ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দিনটি উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সব সার্কেল অফিস স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বা নিজস্ব জায়গায়, ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ রোপণ করবে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহে জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্রপতির বাণী : ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০২৪ সালের আজকের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমি দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যারা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করা ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সব বীর জুলাই যোদ্ধার ত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাণীতে বলেন, বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য। একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী : ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে এক পৃথক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনও দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না।

৫ আগস্ট ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস দিবসটি উপলক্ষে দেশের আপামর জনসাধারণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আজ আমি স্মরণ করছি সেই সব সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি সব জুলাই যোদ্ধাকে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, টানা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জুলাই শহীদদের স্মৃতি রক্ষা ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

যা থাকছে ঘোষণাপত্রে : গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গত এক বছর আলোচনায় ছিল ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। একপর্যায়ে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারই ঘোষণা করবে। এর পর কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই ঘোষনাপত্র তৈরি করে সরকার। ফলে এতে কী থাকছে, তা এখনও গোপন রয়ে গেছে। তবে ঘোষণাপত্রে থাকতে পারে এমন বেশকিছু বিষয় ইতোমধ্যে নানা ফোরামে আলোচিত হয়েছে।

জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রস্তুত করে গত মাসে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতামত নেওয়া হয়। ঘোষণাপত্রে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোন প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে, সেটিরও উল্লেখ থাকছে ২৬ থেকে ২৭ দফার এই ঘোষণাপত্রে।

জানা গেছে, এ ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের সংবিধানে যুক্ত করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও মতবিরোধ চলছে। এ নিয়ে কিছুটা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে বিএনপি ও এনসিপি। এই ঘোষণাপত্রের শুরুতে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা, শোষণ নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের বিষয়টি উল্লেখ থাকছে। পরে ১৯৭৫ সালের একদলীয় বাকশাল কায়েমের বিষয়টিরও উল্লেখ থাকছে ঘোষণাপত্রে। সেই সঙ্গে সিপাহি-জনতার বিপ্লবে বাকশালের অবসান কীভাবে হয়েছিল, সেটিও থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে। পরের দফায় আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকেও যুক্ত করা হয়েছে।

খসড়ার এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সে সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের এই ঘোষণাপত্রে যুক্ত থাকছে আওয়ামী লীগ শাসনামলের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং জাতীয় সংসদের তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের বিষয়গুলো। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিরোধী মত, জনগণকে চরম নির্যাতন-নিপীড়ন, সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের বিষয়গুলোও যুক্ত থাকছে এই ঘোষণাপত্রে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনতার অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের প্রেক্ষাপট, আগামীতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার, আওয়ামী লীগ আমলের সব গুম, খুন, দুর্নীতির বিচার ও জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে সংস্কার উদ্যোগের বিষয়গুলোও থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে। এই ঘোষণাপত্রের সর্বশেষ দফায় বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের পাঁচই আগস্ট থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com