রবিবার, ০১:২৩ অপরাহ্ন, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটে গতি চায় আইএমইডি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাসপোর্ট ইস্যু এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভোগান্তি ছাড়া গমনাগমন সুনিশ্চিত করতে ‘ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সরকার। ১০ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি গত সাত বছরে বাস্তবায়নে অনেকটা সাফল্য পেলেও কাজে গতি এবং ব্যবহারগত কৌশলের অভাবে এর সুফল প্রত্যাশিত মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম দ্রুত ও সহজ করতে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে স্থাপিত ইলেকট্রনিক গেটের (ই-গেট) সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অবশিষ্ট তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং এর সুফল পেতে প্রতিদিনে গড় পাসপোর্ট ২০ হাজার প্রস্তুত করা এবং ই-গেটগুলো ব্যবহারের সুবিধা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও প্রচার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সরকারের প্রকল্পবিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থাÑ বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকার মনে করে, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ই-পাসপোর্টের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পাসপোর্টের মাধ্যমে সেবার মান উন্নত দেশগুলোর মতো স্মার্ট ও দ্রুততর হবে এবং পাসপোর্টের সেবায় গুণগত পরিবর্তন আসবে। এতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। এই লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীনে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি আইএমইডি প্রকল্পের ওপর পরিচালিত নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নুরুস সালাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ই-গেট ছাড়া প্রকল্পের অন্য সব কাজ ভালোভাবেই চলছে। ই-গেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জার্মানভিত্তিক যে কোম্পানি কাজ করে, তাদের সঙ্গে বিগত সরকার চুক্তি করেছে। গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই গ্রাহকরা সেবা নিতে পারছেন।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি : জানা গেছে, এই প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়নে মেয়াদ ১ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৮ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পরে জার্মানির সহায়তায় যথাসময়ে বাস্তবায়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট হওয়ায় প্রয়োজনীয় নতুন অংশ সংযোজন করে ২০২২ সালের গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় ৪ হাজার ৪০২ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বা ৯৪.৯৬ শতাংশ। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রকল্পের অগ্রগতি : আইএমইডির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪ হাজার ৮৯৪ কোটি ৪ লাখ টাকা বা ৫৪.১৪ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ প্রস্তুতকৃত ই-পাসপোর্ট বুকলেট এবং ৩ কোটি ৫০ লাখ ই-পাসপোর্টের কাঁচামাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫০ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট এবং ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪ হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানি শেষ হয়েছে। এ ছাড়া পাসপোর্ট এনরোলমেন্টের ক্ষেত্রে চলতি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৪ হাজার ২০৯ জন পাসপোর্ট প্রার্থী আবেদন করেছেন, এর মধ্যে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৬ জনকে ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছে, অবশিষ্ট ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬৩টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরে সারা বিশ্বে ৮০টি বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৯টি মিশনে চালু হয়েছে। এই মিশনগুলোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৫টি ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২১টি মিশনে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে চালু হবে।

অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় মোট ৫২টি ই-গেট এবং অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৫টি ই-গেট চালু হয়েছে এবং ৭টি ই-গেটের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মূল ভবনে একটি ডেটা সেন্টার স্থাপন ছাড়াও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে যশোরে ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরও ৫০ জনকে সম্ভাব্য প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের কার্যক্রম সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য জার্মানিস্থ মিউনিখে একটি রেফারেন্স পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট যেহেতু একটি সেবামূলক কার্যক্রম, তাই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা ইতোমধ্যে প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের অধীনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরগুলোতে ই-গেট সেবা চালু করা হয়েছে। তবে সরেজমিন দেখা যায়, ই-গেট ব্যবহারের জন্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। বিশেষ করে ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্টধারীদের জন্য পৃথক অ্যালাইনমেন্ট এবং ই-গেট ব্যবহার করতে হবে এ ধরনের কোনো সাইন বা চিহ্ন নেই। এর ফলে অনেক ই-পাসপোর্টধারী জানেন না তাদের ই-গেট ব্যবহার করতে হবে। ই-গেট ব্যবহার করে একজন ই-পাসপোর্টধারী দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার কথা, বাস্তবিক অর্থে তা হচ্ছে না। কারণ একজন যাত্রীকে দুবার লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ ও ই-গেটে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব দেখা গেছে। অনেকেই এখনও প্রশিক্ষণ পাননি। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট ও স্থলবন্দরে পোস্টিং পাওয়া নতুন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ই-পাসপোর্ট এবং ই-গেট ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এতে কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।

দুর্বল দিক : প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকল্পটির অন্যতম সবল দিক হচ্ছে, প্রকল্পটি জিটুজির ভিত্তিতে প্রবর্তন করা হয়েছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদি হওয়ায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিরলসভাবে উন্নতমানের ই-পাসপোর্ট জনগণকে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি উন্নত প্রযুক্তির এবং প্রকল্পের অতিবাহিত সময় অনুযায়ী অগ্রগতিও সন্তোষজনক। তবে প্রকল্পের দুর্বল দিকগুলোর অন্যতম হচ্ছে আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, যথাস্থানে কার্যকর ই-গেট স্থাপন না করা, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাগণের মধ্যে সমন্বয়হীতা এবং ই-গেট সার্ভার এবং এসবি সার্ভারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com