যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন জট। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস)-এর তথ্যমতে, বর্তমানে মুলতুবি আবেদনপত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখে—যা দেশটির অভিবাসন ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর ফলে লক্ষ লক্ষ আবেদনকারী পড়েছেন আইনি ও ব্যক্তিগত অনিশ্চয়তার মধ্যে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন গ্রিন কার্ডধারীরা। তাদের নবায়নের জন্য ফর্ম আই-৯০ জমা দেওয়ার পর গড় প্রক্রিয়াকরণ সময় এখন ৮ মাসেরও বেশি, যা অনেককে চাকরি, ভ্রমণ বা অন্যান্য কাজে সমস্যায় ফেলছে।
তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জটিল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
আইন সংস্থা মেয়ার ব্রাউনের অংশীদার এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা মরগান বেইলি জানান, “মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রিন কার্ড নবায়নের জন্য ফর্ম আই-৯০ জমা দিলে ইউএসসিআইএস একটি রিসিপ্ট নোটিশ দেয়। এটি মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ডের বৈধতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৪৮ মাস বাড়িয়ে দেয়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “রিসিপ্ট নোটিশ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রিন কার্ড একসঙ্গে দেখালেই সেটি বৈধ প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। এতে কোনো নিয়োগকর্তা বা অভিবাসন কর্মকর্তা বিভ্রান্ত হওয়ার কথা নয়।”
গ্রিন কার্ডের মেয়াদ শেষ মানেই অধিকার হারানো নয় : বেইলি স্পষ্ট করে বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড মানে অভিবাসন স্ট্যাটাস শেষ হয়ে যাওয়া নয়। একজন মার্কিন নাগরিক যেমন পাসপোর্ট হারালেও নাগরিকত্ব হারায় না, তেমনই গ্রিন কার্ডধারীর আইনি অবস্থানও বহাল থাকে।”
যেসব গ্রিন কার্ডধারীর রিসিপ্ট বা মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড কিছুই নেই, তারা ইউএসসিআইএস-এর স্থানীয় অফিস থেকে আই‑৫৫১ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে পারেন। এটি একটি অস্থায়ী অথচ বৈধ পরিচয় প্রমাণ, যা চাকরি, ভ্রমণ বা যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের জন্য কার্যকর।
প্রক্রিয়াজটে আটকে থাকা অভিবাসন স্বপ্নগুলো : অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউএসসিআইএস অনেক আগে থেকেই সেসব আবেদনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে যেগুলো সরাসরি অভিবাসন মর্যাদায় প্রভাব ফেলে। গ্রিন কার্ড নবায়নের মতো অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ আবেদনগুলো তাই অনেক সময় অপেক্ষমাণ তালিকায় পড়ে থাকে।
তারপরও আশার কথা এই যে, কার্ড দেরিতে পেলেও গ্রিন কার্ডধারীর স্থায়ী বসবাসের অধিকার থেকে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভেও জটিলতা, আতঙ্কে বৈধ অভিবাসীরাও : এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির প্রেক্ষিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হামাস-সমর্থনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিল করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপের আওতায় শুধু অননুমোদিত অভিবাসীরাই নয়, বরং বৈধ স্ট্যাটাসধারীরাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অভিবাসন অভিযান চলাকালে অনেক গ্রিন কার্ডধারী ও আবেদনকারী আটক হয়েছেন, যা পরিস্থিতির মানবিক দিকটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
চাপের মধ্যেও আশাবাদী থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা নিয়ম মেনে আবেদন করছেন এবং আইন সম্পর্কে সচেতন, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা কেবলমাত্র সরকার বাতিল করলেই শেষ হয়—নবায়নের দেরিতে নয়।