দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কেউ যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে, অন্যায় করতে গেলে মানুষ ক্ষমা করবে না। মানুষ ভালোবাসবে না, ওই আওয়ামী লীগকে মানুষ যেভাবে ছুড়ে দিছে, সেভাবে আপনাদের কেউ ছুড়ে দেবে। সুতরাং অন্যায় কেউ যেন না করে সেদিক খেয়াল রাখবেন।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের নেতাদেরকে অনুরোধ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সমস্ত অপকর্মগুলোকে বন্ধ করার চেষ্টা করবেন, যদি কেউ করতে চায়। আমাদের জেলার নেতৃবৃন্দদের বলবেন। না হলে সরাসরি পুলিশে তুলে দেবেন। এ ধরনের অন্যায়, অত্যাচার যাতে কেউ করতে না পারে মানুষের ওপর।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কেউ কেউ বোঝানোর চেষ্টা করে ওই ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা নাকি আবার ফিরে আসবে, ওটা আমাদের কিছু করতে হবে না, ওর (শেখ হাসিনা) ব্যবস্থা মানুষই নিয়ে নেবে। সাধারণ মানুষই তার ব্যবস্থা নেবে কারণ যে অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। তাকে আর কোনো দিন এ দেশে এসে রাজনীতি করতে হবে না। আর যদি করতেও চায় জনগণ তাকে এ দেশের রাজনীতিতে গ্রহণ করবে না। ‘
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত, আল্লাহর অশেষ রহমতে ওই ডাইনির হাত থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আমরা একজন ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক ডাইনির, যে আমাদের দেশকে ছিন্নভিন্ন করেছে তার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে গিয়ে বসে আছে, ওখান থেকে গুতাগুতি করতেছে। এতই যদি রাজনীতি করো, মানুষের উপকার করো তাহলে আসো মানুষের সামনে এসে দাঁড়াও। আমরাও তো রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনও নিয়েছি। তো আসেন আপনি (শেখ হাসিনা), দেশে আসেন- যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো ফেস করে দাঁড়ান না দেখি। এতই যদি এত জনপ্রিয় মানুষ তাহলে পালায় গেছেন কেন?’
বিএনপির লক্ষ্য একটাই, সুখী সমৃদ্ধি বাংলাদেশ দেখতে চাওয়া- এমন মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা সুন্দর সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা বিভাজন দেখতে চাই না, আমরা ভালোবাসার একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই। প্রতিশোধ চাই না, প্রতিহিংসা চাই না, আমাদের সাথে যে অন্যায়-অত্যাচার হয়েছে তার জন্য আমরা কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না। ‘
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে একটা সুন্দর, ভালোবাসা দিয়ে, সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান; সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আমরা এখানে শান্তির বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি বিএনপি সরকারের আমলে আপনারা সবচেয়ে নিরাপদে থাকবেন ইনশাআল্লাহ। আর ফেসবুক ইউটিউবে অসংখ্য মিথ্যা কথা আসে, এমন এমন কথা আসে শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এগুলোতে বিভ্রান্ত হবেন না। ’
তিনি বলেন, ‘মিটিংগুলোতে মানুষের মুখ দেখলে বুঝতে পারবেন সবাই পরিবর্তন চায় এবং সবাই ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। আর বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে নির্ভরশীল, নিরাপদ দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপি নিয়েই তারা সেই সরকার গঠন করতে চায়। দলটা আপনাদের, ধানের শীষটা আপনাদের, এটা রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের। ‘
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করেছি, এমন একটা মানুষ নাই যার কষ্ট হয়নি, ক্ষতি হয়নি। আমাদের সামনে একটা সুযোগ আসছে, এই সুযোগটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এখন সুন্দর করে একটা দেশ তৈরি করার সুযোগ আসছে; এটা যদি আমরা আজকে সবাই মিলে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সব ধর্ম, সব দল সবাই মিলে একমত হয়ে যদি আমরা শুধু এইটুকু ঠিক করি আমরা আগের মত ভোটটা দেব।’
তিনি বলেন, ‘‘‘আমার ভোট আমি দেব- যাকে খুশি তাকে দেব’’, ছিল না এই স্লোগান? দিছেন না সেভাবে ভোট? সেভাবে চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করছেন। এমপি ভোটও করছেন, কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আর কোনো নির্বাচন করতে পারেন নাই এবং ভোটও দিতে পারেন নাই। বিশেষ করে তরুণ ছেলে-মেয়েরা যাদের বয়স কম ছিল বা যাদের বয়স ১৮ পার হইছে তারা একবারও ভোট দিতে পারে নাই। ‘
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই বার সেই সুযোগ আসছে আমরা ভোট দিয়ে আমাদের এমপি নির্বাচন করতে চাই, আমরা ভোট দিয়ে আমাদের পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই এবং সরকারটা নির্বাচন করতে চাই। যাতে করে আমাদের কথা শুনবে, আমাদের কাজগুলো করবে। ’
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।