‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট মানবিক সঙ্কট’ সাহসিকতার সাথে মোকাবেলায় বৃহত্তর বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক সংহতি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী, সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক সংহতি আগের চেয়ে বেশি মনোযোগের দাবি রাখে।’
বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ডি-৮ মন্ত্রী পরিষদের ২০তম অধিবেশনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অধিবেশনে যোগ দেন।
ডি-৮ ডেভেলপিং-৮ নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুর্কিয়ের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতার একটি সংস্থা। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৭ সালে ইস্তাম্বুলে এটি চালু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে একটি মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে যা খাদ্য, সার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে সাহসের সাথে এই মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে আসা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব যখন সঙ্কটে তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ধকল সইতে হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেশিরভাগ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব প্রশমিত করতে এবং কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির গতিপথে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সরকার ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য ২৮টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা দেশের জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
এই প্যাকেজগুলো থেকে মোট ৬৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ এবং এক লাখ ৮ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফলভাবে তার লক্ষ্যবস্তু জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে টিকা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার সূচকে বাংলাদেশ ১২১টি দেশের মধ্যে পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে।
দেশের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে সব সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশ চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি করেছে।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডি-৮সিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডি-৮ এবং এর ২৫ বছরের যাত্রার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সূত্র : ইউএনবি