কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) শান্তির পথে ফিরে আসতে ভিডিও বার্তা দিয়েছে বম সোস্যাল কাউন্সিল। একই সঙ্গে লুট করে নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। বোম ভাষায় দেওয়া ভিডিও বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দেওয়া ২২ মিনিটের ভিডিও বার্তায় বম সমাজের নেতারা এই আহ্বান জানান।
বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রেভা. লালজার লম বম ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কেএনএ/কেএনএফ নেতাদের কিছু কথা বলার এবং অনুরোধ করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ/কেএনএ সংগঠনের সাথে সরকারের যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটি আজকের ঘটনা নয়। এটি গত ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তখন আমরা এ কমিটির দায়িত্বে ছিলাম না।’
বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, ‘গেল ২-৩ এপ্রিল রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতের ঘটনা এবং তার পরবর্তীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বম গ্রামগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ ছাড়া সকলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি প্রাণ বাঁচাতে মৃত্যু ভয় থেকে অনেক বম সম্প্রদায়ের মানুষজন দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। আম, আনারস ফলমূল বিক্রি করে কোটি টাকা পাওয়ার কথা সেখানে বম সম্প্রদায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বনে-জঙ্গলে পালিয়ে থেকে খাবার না পেয়ে কলা গাছ খেয়ে দিনাতিপাত করছে। বম সমাজ আজ যে চরম দুর্বিষহ দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে, তা সরকারের ভাষ্য মতে ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি হয়েছে।’
রেভা. লালজার লম বম বলেন, ‘আমাদের বম জাতিরা আজ যে দুর্বিষহ দিন পার করছে তার কারণ ব্যাংক ডাকাতি ও সরকারের অস্ত্র লুট করার কারণে। সরকারের অনুরোধে বা নির্দেশনায় আমরা এখানে সমবেত হতে আসিনি। বরংচ সাধারণ বম সমাজের মানুষদের আহ্বানে ও অনুরোধে সাধারণ মানুষের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। সকল বম সম্প্রদায়ের মানুষের একমাত্র দাবি হলো, এই ব্যাংক ডাকাতির সময়ে লুট করে নেওয়া দেশরক্ষাবাহিনীদের অস্ত্রসমূহ যতদ্রুত সম্ভব যেন ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। পাহাড়ে এখন জুম চাষের মৌসুম। জুমে বা কাজে গেলে কখন তাদের গায়ে গুলি লাগবে এই ভয়ে কেউ জুমের কাজে যেতে পারছে না।’
সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সাথে আমাদের যেন অতীতের মত পুনরায় যেন সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই জন্য সকল বম সম্প্রদায় মানুষদের পক্ষ হয়ে অনুরোধ করছি যে, লুট করে নেওয়া সরকারের ১৪টি অস্ত্র ফেরত দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প পথ নেই।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বম সোস্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লাল থাং জুয়াল বম, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম, রুমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাং খাম লিয়ান বমসহ বম সোস্যাল কাউন্সিলের ১০-১৫ নেতা।