বুধবার, ০৫:১৬ অপরাহ্ন, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

দান-সদকা বিপদাপদ দূর করে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

দান-সদকা মহান ইবাদত। দান-সদকা দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করে এবং বিপদাপদ দূর করে। যেসব ইবাদতের অসংখ্য পুরস্কারের কথা কোরআন-হাদিসে উল্লেখ হয়েছে, দান-সদকা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ইসলাম এমন জীবনব্যবস্থা, যার অন্যতম সৌন্দর্য হলো দান, সদকা, উদারতা ও মানবকল্যাণ। এটি প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব, যিনি তার জীবনের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণে প্রতিক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক নীতি অনুসরণ করবেন। তিনি তার সম্পদ শুধু নিজেই ব্যয় না করে তার সম্পদে অন্যদের যে অংশ আছে, সেটি প্রদানেও সচেষ্ট থাকবেন। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত যেন সবাই মিলে উপভোগ করতে পারেন, তা তিনি নিশ্চিত করবেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করো। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। একে আটকে রেখো না, আটকে রাখাটা তোমার জন্য অকল্যাণকর হয়ে দাঁড়াবে। প্রথমে তোমার পরিবার ও তোমার ওপর নির্ভরশীলদের জন্য ব্যয় করো। আর তারপর তাদের জন্য হাতটা উঁচু করো, যাদের হাত তোমাদের তুলনায় নিচে।’ (সহিহ মুসলিম)

ইসলাম সর্বদা তার অনুসারীদের আল্লাহর রাস্তায় এবং অভাবীদের জন্য সম্পদ ব্যয় করার নির্দেশ দেয়। মানুষ দুনিয়াতে দানশীল ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করে এবং তার কল্যাণের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে। আল্লাহতায়ালা দানশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। তাই তিনি দানশীল ব্যক্তিকে কেয়ামতের দিন চূড়ান্ত সাফল্য দান করবেন। তার কাজের প্রতিদান হিসেবে তাকে জান্নাত দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দানশীল মানুষ আল্লাহর অতিশয় কাছে থাকেন, মানুষেরও কাছাকাছি ও জান্নাতেরও কাছে থাকেন। জাহান্নাম তার থেকে দূরে থাকেন।’ (তিরমিজি) কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা দানশীলতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! আমি তোমাদের যে জীবিকা দান করেছি, সেদিন আসার আগেই তোমরা তা থেকে ব্যয় করো, যেদিন না থাকবে কোনো বেচাকেনা আর না থাকবে কোনো বন্ধুত্ব ও সুপারিশ।’ (সুরা বাকারা ২৫৪) দানের অপরিসীম সওয়াব ও ফজিলতের কথা শুনে আমরা অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনাথ, অসহায় ও বিপদগ্রস্ত লোকদের সহায়তা করি, তাদের প্রয়োজন পূরণে দান-সদকা করি। আমাদের এসব দান ও অনুদান যদি হালাল ও বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে তা গৃহীত হবে। অন্যথায় এর কোনো প্রতিদান মিলবে না এবং কানাকড়িও মূল্যায়িত হবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি, তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করো। আর নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করো না, অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাকো। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা ২৬৭)

দানশীলতা মুসলিম উম্মাহর ভেতর সাম্য ও একতার ভিত রচনা করে। দান-সদকার মাধ্যমে ইমানে পরিপূর্ণতা আসে। সম্পদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়। দানশীলতা মানুষকে কৃপণতা থেকে বের করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চরিত্রের অধিকারী বানিয়ে দেয়। দান-সদকা আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে নিয়ামক শক্তি। এর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। সর্বোপরি দানশীলতা মানুষকে পাপমুক্ত করে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।

দান-সদকা গোপনে ও প্রকাশ্যে দুভাবেই করা যায়। তবে গোপনে করা উত্তম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান-সদকা গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহতায়ালা তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা ২৭১)

কোরআনে দান-সদকার উপকারিতা ও ফজিলত নিয়ে আল্লাহতায়ালা চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের ধন-সম্পদ খরচ করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানার মতো, যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়। যার প্রতিটি শীষে একশটি করে শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ মহাদানশীল ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা ২৬১)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর যেসব উত্তম বস্তুসামগ্রী তোমরা ব্যয় করবে, তার লাভ ও সওয়াব তোমাদের কাছেই পৌঁছাবে। বস্তুত তোমাদের ব্যয় আল্লাহর ওয়াস্তেই হওয়া উচিত। আর যেসব উত্তম বস্তুসামগ্রী তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে ব্যয় করবে, তোমরা তার পরিপূর্ণ বিনিময়প্রাপ্ত হবে। আর তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা ২৭২)

উকবা ইবন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকাকারীকে তার দান কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। আর মুমিন ব্যক্তি কেয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে।’ (তাবারানি) দান-সদকার উপকার শুধু যে আখেরাতে পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। দুনিয়াতেও এর প্রতিদান মিলবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দান-সদকা আল্লাহর ক্রোধের আগুন নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ (তিরমিজি)

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন, তিনি সুদিনে বা বিপর্যয়ে সর্বদা আল্লাহর সুদৃষ্টি ও আশ্রয়ের আওতায় থাকেন। ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে, তার সম্পদ বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে। আর যে ব্যক্তি কৃপণ ও সম্পদ ব্যয়ে দ্বিধা করে, তারা তাদের চূড়ান্ত লোকসান ও ধ্বংসকেই ডেকে নিয়ে আসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা আকাশ থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! যিনি ভালো কাজে দান করেছেন, তাকে আপনি এর উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি কৃপণদের ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ বুখারি) আমের ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তুমি যা কিছু দান করবে অবশ্যই তার যথাযথ প্রতিদান তোমাকে দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে এক লোকমা খাবার তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও, তারও বিনিময় তুমি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

সমাজের গরিব, দুস্থ, অভাবী ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করার প্রতি ইসলাম অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। সুযোগ হলে সাধ্যমতো তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা, খাবার খাওয়ানো ও খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের খাবার দান করার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্ত করা কিংবা দুর্যোগ ও সংকটের দিনে এতিম, আত্মীয়স্বজন ও ধুলো-ধূসরিত মিসকিনদের অন্নদান করা।’ (সুরা বালাদ ১০-১৬)

অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন ‘মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা।’ (সহিহ বুখারি) আল্লাহই কিছু মানুষকে সম্পদ দিয়েছেন, আবার কিছু মানুষকে নিঃস্ব করেছেন। যাদের সম্পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের সম্পদে অসহায় ও গরিব-মিসকিনদের হক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ধনীদের ধন-সম্পদে বঞ্চিত ও প্রার্থী মানুষের হক রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত ১৯) বস্তুত মানুষের সেবা করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আবশ্যক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com