প্রতিবছর একুশ, স্বাধীনতা, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গবেষক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের দেয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে এসব পুরস্কার নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনা হয়। এসব পুরস্কারের একটি অংশ আবার চলে যায় মরনোত্তরদের কাঁধে। জীবদ্দশায় কর্মগুণ চিনতে না পারা আমাদের পুরস্কার প্রদানে জড়িত বিচারকরা, তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকবার জন্য মৃত ব্যক্তিদের বেছে নেন।
অথচ দেখেন এই ৮৩ বছর বয়সী মানুষটাকে রাষ্ট্র চিনতেই পারেনি। এই মানুষটার অবদান মূল্যায়ন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন বারবার। কারণ এই ভদ্রলোক দলের পেছনে ছোটেনি, পুরস্কারের লোভে স্তুতি গেয়ে বই লেখেনি। বরং নিজের বেতন, আয় থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করে গিয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। যিনি বাংলাদেশে পদার্থ বিজ্ঞানে দেশর একমাত্র এমিরেটাস অধ্যাপক। আপাদমস্তক একজন একাডেমিশিয়ান। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি তার কখনোই ছিল না। কিন্তু জ্ঞান বিলির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থীর কাছে হয়ে আছেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র হিসেবে।
আর কয়েকদিন পর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হবে। হয়তো সেখানেও থাকবে বিতর্ক। তবে বিশ্বাস করুন, এই নানাগুণে গুণান্বিত অধ্যাপক বসাককে যদি রাষ্ট্র সম্মানিত করে, তাহলে জেনে রাখবেন সেদিন ‘বিতর্ক’ করার সাহস কেউ দেখাবে না, বরং সঠিক মানুষের মূল্যায়ন দেরিতে কেন করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাককে চিনতে না পারা আমাদের রাষ্ট্রের জন্য চরম ব্যর্থতা, অপমানের। সঠিক সময়ে সঠিকজনকে মূল্যায়ন করতে না পারলে এইসব গুণীদের হয়তো কিছু আসে যায় না। কিন্তু জাতি হিসেবে তাদের সৃষ্টিকর্মকে মূল্যায়ন করতে না পারার দায় বেড়েই চলছে। অন্তত এবার সেই দায় থেকে অন্তত আমাদের মুক্তি দিন।
এই ব্যক্তি একদিন আমাকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি, ছাত্র পড়ানোর জন্য, জ্ঞান তৈরির জন্য। রাজনীতি যদি করতাম তাহলে, গবেষণা কেন করছি? শিক্ষার্থীদের হাতে মশাল জ্বালিয়ে দেয়া আমার কাজ। বাঁকি পথটা তারাই দেখে নেবে।
বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ মনে করতে কোন রাজনৈতিক দলের লোক হতে হয়, তা আমার জানা নেই। তিনি আমাদের সবার নেতা। আর একজন শিক্ষক হিসেবে ক্লাসের বাইরে গবেষণার ডেস্ক আমার বড় পাওয়া। এমন সংকল্প নিয়ে সফলভাবে শিক্ষকতা শেষ করা মানুষটির জন্য এই রাষ্ট্রের কিছুই করবার নেই?
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।