মাত্র তিন দিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এজন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন মুসলমানরা। তবে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ এই মাসের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা। বাজারে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যেগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ছোলা, খেজুর, মসুর ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, বেসন, মাছ ও গোশতের দাম কেজিতে ৪ থেকে ১৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছোলার দাম গত এক বছরের ব্যবধানে ১১ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে খুচরায় কেজি মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজ কেজিতে ১৫৭ থেকে ১৭৫ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি। উল্টো সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ থেকে ১০ শতাংশ কমে ১৬৩ থেকে ১৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি কেজিতে ২২ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার মসুর ডাল কেজিতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। সাধারণ মানের খেজুর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা ভালোমানের খেজুর আজোয়া ও মরিয়ম মানভেদে কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যে দাম সামান্যও কমেনি বরং বেড়েছে। সয়াবিন তেলেও সবাই সুফল পাচ্ছে না। কারণ বাজারে ১ মার্চ থেকে নতুন কম দামের সয়াবিন তেল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনো বেশির ভাগ দোকানে পুরনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কম দরের পাঁচ লিটারের বোতল আসলেও এক বা দুই লিটারের বোতলের দেখা মিলছে না।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মাছ-গোশতের দাম। এক লাফে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। তবে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে।
শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহেও ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর গরুর গোশত ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। রমজানকে সামনে রেখে এই অস্তিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেন।
গোশতের মতো মাছের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাইজ ভেদে তেলাপিয়া ২২০-২৩০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গেল সপ্তাহেও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে শুরু করে সাইজ ভেদে ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ। মাছ যত বড় তার দাম তত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ গোশতের বাজার চড়া হলেও এখনো কিছুটা স্বস্তি আছে সবজির বাজারে। বাজারে ভালো মানের আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। একই দামে মিলছে বাঁধাকপিও। শিম ৬০-৭০, টমেটো ৪০-৫০, করল্লা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০-৮০ টাকা মান ও সাইজভেদে লাউ ৭০-৯০ টাকা, শসা ৭০-৮০, মুলা ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সরিষা শাকের আঁটি ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ১৫ টাকা, পালং ১০-১৫ টাকা, লাউশাক ৩০-৪০, লালশাক ১৫ টাকা, বতুয়াশাক ১৫-২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে দোকানের তুলনায় ভ্যানে কিংবা ফুটপাথের দোকানগুলোতে প্রত্যেক সবজির দাম ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে কিছুতেই কমছে না পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা কমেছে আদা আর রসুনের দাম। নতুন রসুন ১৭০-১৯০ টাকা ও আদা ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ক কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সেই সুবিধাগুলো ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁচ্ছাচ্ছে না। তবে সরকার পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যায়ে তদারকিতে জোর দিলে সামনে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে এখন দাম বাড়তি। প্রতি বছরই বড় এই ঘাটতি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। যখনই এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয়, তখনই দেশের বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়ে দাম বেড়ে যায়। এবারো তাই হচ্ছে। বাজারে দাম কমাতে হলে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং সরবরাহ বাড়াতে হলে আমদানির বিকল্প নেই। সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু এখনো আমদানি শুরু হয়নি। যার কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম তেমনভাবে কমছে না।