অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে পোলট্রি মুরগির দাম। এর আগে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। অথচ এক মাস আগেও এই মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে গেছে এই মুরগির দাম। একই সাথে বেড়েছে অন্যান্য মুরগি ও ডিমের দামও। এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। একই সাথে বাড়ছে ডিমের দামও। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও যেটি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগিও ডিমের মতো বাড়তি দেখা গেছে গরুর গোশতের দাম। বেশির ভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগি¦তণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতাকে দাম শুনে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
বাসাবো বাজারে বাজার করতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ২২৫ টাকা। মাসখানেক আগে কিনতাম ১৫০ টাকা। এর মধ্যে কী হলো যে দাম শুধু হু হু করে বাড়ছে। এভাবে আমাদের জীবন চালানো সম্ভব না। কোনোভাবেই হিসাবের মধ্যে সংসার চালানো যাচ্ছে না। মাছ-গোশত খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিতে হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়ুক আমরাও সেটা চাই না। কারণ দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, একইভাবে বাঁধাকপিও প্রতি পিস ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, সিম মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ক্ষীরা প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি প্রতি কেজি ১২০, করলা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পটল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতা মাসুম মিয়া বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজার ভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ৫-১০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজার থেকে মাল কেনার পর পরিবহন খরচ হয়। সে কারণে লাভ রেখে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। বাজার ভেদে সবজির দামে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায়। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি প্রজাতির ট্যাংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে চীন থেকে আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। চীন থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। কেরালা জাতের আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা ব্রি-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি, চিকন চাল মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।