বৃহস্পতিবার, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সিকিউরিটি গার্ড থেকে বিসিএস ক্যাডার কুড়িগ্রামের দিনমজুর জিয়াউর

সময়ের কন্ঠধ্বনি ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৮৯ বার পঠিত

জীবিকার তাগিদে কখনও দিনমজুর, কখনও ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডসহ নানা পেশায় কাজ করেও বিসিএস জয় করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মো. জিয়াউর রহমান। দারিদ্রতার শত কষাঘাতেও লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি তিনি। অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে ৪১তম বিসিএস এ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন জিয়াউর রহমান। তার এ সাফল্যে খুশি পরিবার, স্থানীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জিয়াউর রহমান বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন-এমন খবরে তার বাড়িতে ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিনই তাকে দেখতে আসছেন প্রতিবেশীসহ দূর-দূরান্তের মানুষজনও।

উলিপুরের ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের দালালীপাড়া গ্রামে মাত্র তিন শতাংশ জমির ওপর জরাজীর্ণ বাড়ি জিয়াউর রহমানের। বাবা অসুস্থ থাকায় ছোটবেলা থেকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের হাল। জমিতে ধান কাটার কাজসহ যে কোন শ্রমিকের কাজ করে পাওয়া অর্থে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং ২০১২ সালে দাখিল ও ২০১৪ সালে আলিম পাশ করেন তিনি।

পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার আশায় ঢাকায় গিয়ে চাকরি করেন সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে। কাজ করেন কারখানাতেও। এমনকি টাইলস মিস্ত্রির কাজও করতে হয়েছে তাকে। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। ৪১তম বিসিএস এ প্রথম পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন জিয়াউর রহমান।

শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত মো. জিয়াউর রহমান জানান, ছোটবেলা থেকেই আমাকে অন্যের জমিতে ধানকাটার মজুরি দিতে হয়েছে। ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজও করতে হয়েছে। এমনও সময় গেছে হাতে টাকা নেই। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ, বাড়িতে টাকা পাঠানোসহ চাকরির আবেদন করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু উপায় ছিল না। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় সংসারেরও অভাব অনটন ছিল। সব মিলিয়ে আমি হাল ছাড়িনি। স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষকরাও নিজে থেকে আমাকে সহায়তা করেছেন। আমি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি। আমি অবশ্য আমার মতো যাদের পাবো তাদের পাশে দাঁড়াবো।

জিয়াউর রহমানের মা জোলেখা বেগম বলেন, আমাদের অভাবের সংসার থেকে ছেলেকে কিছুই দিতে পারিনি। বরং ছেলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে সংসারের খরচ চালাতো। ছেলের জন্য দোয়া আছে।

জিয়াউর রহমানের বাবা ছকিয়ত আলী জানান, আমার বাড়ি ভিটার তিন শতক জমি ছাড়া আর কিছু নেই। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয়। জিয়াউরের মা অন্যের বাড়িতে কাজও করেছে। এই পরিবার থেকে ছেলের জন্য কিছু দেয়া সম্ভব হয়নি। বরং ছেলেই আমাদেরকে দিয়েছে। ছেলে বড় চাকরি পেয়েছে এতে আমি খুশি।

অভাবের সংসারে ছোটবেলা থেকে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বপ্ন জয় করেছেন জিয়াউর রহমান। এতে অত্যন্ত খুশি তার আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী, সহপাঠীরাও। স্থানীয়রা জানান, জিয়াউর রহমান ছোটবেলা থেকেই তার বাবার সঙ্গে অন্যের দিনমজুরের কাজ করতো। সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আমরা তার সফলতায় অনেক খুশি।

অর্থের অভাবে প্রায় লেখাপড়ার হাল ছেড়ে দেয়া জিয়াউর রহমানকে সহযোগিতার কথা জানান স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও।

জিয়াউর রহমানের মাধ্যমিকের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, জিয়াউর আমাদের মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে খুব মেধাবী ছিল। কিন্তু কাজ করার কারণে পড়ার সময় পেত না। তবুও সব সময় ভালো ফলাফল করেছিল।

ধরনীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ, টি, এম, বরকতউল্লাহ জানান, তার আলীম পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা ছিল না। পরে আমি নিজে তার বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে এসে ফরম পূরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে এতে আমরা খুশি। আমরা আশা করি সে যেন মানুষ গড়ার কারিগর হয়।

উলিপুরের দালালীপাড়া গ্রামের ছকিয়ত আলী ও জোলেখা বেগম দম্পতির ছেলে জিয়াউর রহমান। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড় সে। বোনদের বিয়ে হওয়ায় মাত্র তিন শতক জমির ওপর বাবা-মাকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com