বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হৃদরোগীদের চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। অব্যবস্থাপনা এবং অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে হাসপাতালটির কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) দম বন্ধ করার মতো অবস্থা। এছাড়া বছরের পর বছর অকেজো এই ইউনিটের এয়ারকন্ডিশন মেশিনগুলো। যদিও চিকিৎসকদের জন্য থাকা মেশিনগুলো সচল রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গণপূর্তকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে এসি মেরামতের জন্য। তাছাড়া চিকিৎসকদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে তাদের রুমের মেশিন ঠিক রাখতে হয়।
জানা যায়, হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয়তলায় রোগীদের জন্য থাকা সিসিইউতে ১০টি এয়ারকন্ডিশন মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বড় এবং ৬টি ছোট। পিসিসিউতে ছোট ৫টি ও বড় ৩টি অর্থাৎ মোট ৮টি এয়ারকন্ডিশন (এসি) মেশিন রয়েছে। এছাড়া ইকো ও ইটিটি কক্ষে রয়েছে ১টি করে দুটি এয়ারকন্ডিশন মেশিন। রোগীদের সুবিধার্থে থাকা এই ২০টি মেশিনের সবগুলোই অচল। অপরদিকে ওই বিভাগের রেজিস্ট্রারের রুমের একটি, একাডেমিক কক্ষের একটি এবং ৩ চিকিৎসকের কক্ষের ৩টি মেশিন সচল রয়েছে।
সিসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া ঝালকাঠির রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মোসাদ্দেক হাওলাদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, সিসিইউতে ভিড় থাকতেই পারে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। যেখানে হার্টের রোগীদের শান্ত পরিবেশে থাকা দরকার সেখানে হইচই লেগেই থাকে।
আবিদুর রহমান বলেন, আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করায় এখানে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু গরমে টেকা যায় না। সব এসি বন্ধ, একটা বড় এসি চলছে। সিটের তুলনায় এখানে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ, এর মধ্যে এসি না চলায় দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। সুস্থ মানুষ এখানে ঘণ্টাখানেক থাকলে বাতাসের অভাবে এবং গরমে অসুস্থ হয়ে পড়বে। রোগীদের এমন দুর্বিষহ অবস্থা থাকলেও চিকিৎসকরা বেশ আরামে আছেন। তাদের রুমে এসি ঠিকমতো চলছে। রোগীরা গরমে মরলেও চিকিৎসকদের কোনো সমস্যা নেই।
সিসিইউতে দায়িত্বরত এক নার্স বলেন, সরকারি হিসাব মতে সিসিইউ ও পিসিসিইউতে ৪টি করে মোট ৮টি বেড রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী চাপ সামাল দিতে দুটি ওয়ার্ডে মোট ৪৩টি বেড রেখেছে। এখানে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। ফ্লোরে ভর্তি থাকতে হয় বেশিরভাগ রোগীকে। তাছাড়া ওয়ার্ডে এসি না থাকায় গরমে রোগীদের দুঃসহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকায় স্বজনদের আনাগোনাও বেশি। এতে পুরো ওয়ার্ড গরম হয়ে ওঠে। আমাদেরই কাজ করতে অস্বস্তি লাগে।
সম্প্রতি সিসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই ওয়ার্ডে আগে একবার ভর্তি হয়েছিলাম বছর ৪ আগে। তখন পরিবেশ মোটামুটি ভালো ছিল। এখন ময়লা-আবর্জনা। ওখানে চিকিৎসা নিতে গেলেও চিকিৎসা প্রয়োজন ওই ওয়ার্ডের। ডাক্তাররা তো এসি রুসে বসে আরামে কাজ করেন। এসি নষ্ট থাকায় রোগীরা যে গরমে পুড়ছেন সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগী তো বাড়তে থাকবেই। কিন্তু রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে কেন সরকারের কাছে আবেদন থাকবে গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডটিকে যেন সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে এনে রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, রোগীদের জন্য থাকা এসিগুলো অচল করার বিষয়ে গণপূর্তকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। চিকিৎসকদের কক্ষের এসিগুলো সচল রয়েছে, কারণ তারা সঠিকভাবে এই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে জানেন। তাছাড়া তাদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতাল ভবন তো সেই ৬০-এর দশকে নির্মাণ করা। ভবনের পরিধি তো বাড়েনি। এর মধ্যেই আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। জায়গা সংকটের কারণে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি বর্তমান ভবন ভেঙে ১৭ থেকে ২০ তলা ভবন নির্মাণের। প্রকল্পটি পাশ হলে দক্ষিণাঞ্চলে রোগীদের ভোগান্তি থাকবে না।
এসি সচল করা প্রসঙ্গে বরিশাল গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী আবু জিহাদ বলেন, গত বছরও নতুন তিনটি এসি দেওয়া হয়েছে। নতুন এসি সিসিইউ বিভাগে দেওয়ার সুযোগ থাকলে দেওয়া হবে। আর যদি অচল এসি মেরামতের সুযোগ থাকে সেটা করা হবে। যদি কোনোটি সম্ভব না হয় তাহলে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাইব। তবে মূল বিষয় হচ্ছে রিসেন্টলি কোনো চিঠি হাসপাতাল থেকে আমরা পাইনি যে, এসি নষ্ট রয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব কী কারণে এসি অচল রয়েছে।