অ্যালার্জি হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যা পরিবেশের কোনো অ্যালার্জেনের কারণে দেহে হাইপারসেনসিটিভিটি তৈরি হয় বা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়। কোনো অ্যালার্জেনে দেহের যেসব হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন দেখা দেয়, তার নাম টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন। অ্যালার্জি হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমরা যা বুঝি তা মূলত টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজলে, পুকুরে গোসল করলে, ধুলোবালিতে গেলে, একটু ঠাণ্ডা লাগলে বা কোনো ঠাণ্ডা পানীয় পান করলে কারো কারো সর্দি-কাশি শুরু হয়। একই কাজগুলো অন্যরা করলে তাদের কিছুই হয় না। স্বাভাবিক হিসেবে থাকে। এই স্বাভাবিক বস্তুগুলো যাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে, তাদের সর্দি-কাশি শুরু হয়ে যায় অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণে।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেনগুলো আক্রান্ত হয় এবং হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে প্রচুর মিউকাস তৈরি হয়। শ্বাসযন্ত্রে লুউকোট্রিন নামক যে পদার্থ তৈরি হয়, তা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্র উত্তেজিত করে। অর্থাৎ নাক দিয়ে পানি পড়া তথা সর্দি-কাশি, সঙ্গে হালকা গায়ে গায়ে জ্বর- এসব কিছু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণে হতে পারে। অনেক সময় রাইনোভাইরাস অ্যালার্জি হিসেবে কাজ করে। করোনা ভাইরাসে একই রকম অবস্থা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করা উচিত।
চোখের অ্যালার্জি : অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস চোখের একটি অ্যালার্জিজনিত রোগ। এ সময় চোখ লাল হয়। চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
কিছু শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুকুরে গোসল করলে বা খেলাধুলা করলে কিংবা বাইরে চলাফেরা করলে চোখ লাল হয়ে ওঠে, চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে, চোখ চুলকায়। এগুলো মূলত অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের কারণে হয়।
ফুড অ্যালার্জি : অনেকে মাংস, বেগুন বা বাইরের খাবার খেলে শরীরে চুলকানি দেখা দেয়। বমি-বমি ভাব হয়। এগুলো মূলত অ্যালার্জির কারণে হয়। তাদের শরীর ওসব খাবারের জন্য উপযোগী নয় এবং ওই খাবারগুলো যদিও অন্যদের জন্য স্বাভাবিক, তবে তাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে।
ড্রাগ অ্যালার্জি : কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পর তার শরীর চুলকায়। এর মানে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তার হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে এবং ওই অ্যান্টিবায়োটিকটি তার জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। এনাফাইলেক্টিক রিঅ্যাকশন : এনাফাইলেক্টিক রিঅ্যাকশন হচ্ছে ইমারজেন্সি অ্যালার্জিক কন্ডিশন। কারো শরীরে একটি কীটপতঙ্গের সংস্পর্শ লেগেছে অথবা মশা কিংবা অন্যান্য কীটপতঙ্গ কামড় দিয়েছে, এর কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তার শরীররে লাল লাল চাকা! শরীর প্রচ- চুলকায়। সারা শরীর ব্যথা করছে। যাদের শরীর হাইপারসেনসিটিভ, তাদের ক্ষেত্রে মশা, ছারপোকা এসবের কামড়ে এনাফাইলেক্টিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। এটপিক অ্যাকজিমা এক ধরনের অ্যালার্জিক স্কিন কন্ডিশন, যা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে হয়ে থাকে।
চিকিৎসা : অ্যালার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তাই যাদের যে বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের তা পরিহার করে চলতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে যাদের অ্যালার্জিক উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তারা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই ব্যবহার ঠিক নয়।
লেখক : চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সিইও, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা