চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও তার স্বামী চিত্র নায়ক ওমর সানির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এক ছাদের নিচে অবস্থান করেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে সাংসারিক দূরত্বের বিষয়টি শোনা গেলেও এখন তা অনেকটা খোলাসা হতে চলেছে। শুক্রবার অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়েতে সঙ্ঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনায় নায়ক জায়েদের বিরুদ্ধে ওমর সানির অভিযোগের সূত্র ধরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তাতে ওমর সানি জায়েদের বিরুদ্ধে মৌসুমীকে বিরক্ত এবং তার সংসার ভাঙায় ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ আনেন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার চিত্রনায়িকা মৌসুমী উল্টো তথ্য দিলে মৌসুমীর সাথে তার সম্পর্কের দূরত্বের বিষয় স্বীকার করেন ওমর সানি। এরপরই দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়েতে। ওমর সানির অভিযোগ, জায়েদ খান দীর্ঘদিন ধরে মৌসুমীকে বিরক্ত এবং তার সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন। তা নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে বিতণ্ডায় তিনি জায়েদকে চড় মারেন। তাতে জায়েদ তাকে পিস্তল দিয়ে গুলির হুমকি দেন। এ নিয়ে শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ওমর সানি।
কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ, সেই মৌসুমীর মন্তব্যে স্বামী ওমর সানির অভিযোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মৌসুমী এক অডিও বার্তায় ওমর সানির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটা খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ওর মধ্যে গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনোই আমাকে অসম্মান করেনি।’
মৌসুমী বলেন, কেন এ প্রশ্নটা বারবার আসছে, সে আমাকে বিরক্ত করছেÑ উত্ত্যক্ত করছে, আসলে জানি না, এটা কেন হচ্ছে। এটা যদিও একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে সমস্যা আমাদের পারিবারিকভাবেই সমাধান করা দরকার ছিল।
তিনি স্বামী ওমর সানিকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে বলেন, আমি এখানে জায়েদের খুব একটা দোষ পাইনি। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাকে ছোট করার মধ্যে আমাদের যাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করে আসছি, সেই ওমর সানি ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেনÑ সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই আমার সাথে সমাধান করবে, সেটিই আমি আশা করি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মৌসুমী বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক ভাইরা আসলে একটা নিউজ পেলে, কথা না বলেই প্রকাশ করেন। এটা আসলে ঠিক নয়। এটা আসলে আলোচনা করা উচিত। যেহেতু আমার প্রসঙ্গ আসছে, তাই বিষয়টি আমার সাথে আলোচনা করে নিতেন, তাহলে হয়তো প্রসঙ্গটা লিখতেনই না। তিনি (সানি) আসলে একতরফা বলেছেন, কিন্তু আমি বলেছি কি না, আমি অভিযোগ করেছি কি না; জানাটা খুব বেশি জরুরি ছিল।’
মৌসুমীর এমন বার্তার পর নিজের ফেসবুক লাইভে আসেন ওমর সানি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি বিয়ে করেছি ২৭ বছর আগে। মৌসুমী আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা। আমার ফুটফুটে দুটি সন্তান রয়েছে। আমার ছেলে বিয়েও করেছে। মৌসুমীকে অসম্মান করে আমি একটি কথাও বলব না। সে কী মনে করে জায়েদ খানের পক্ষে কথা বলছে, সেটা আমি জানি না।
তিনি বলেন, আমার গার্ডিয়ান হিসেবে আমার ছেলে ফারদিন এবং মেয়ে ফাইজা অবশ্যই আপনাদের সব কিছু ক্লিয়ার করবে। আমার পরিবারের ইজ্জত মানে আমার ইজ্জত, আমার স্ত্রীর ইজ্জত মানে আমার ইজ্জত, আমার ছেলেমেয়ের ইজ্জত মানে আমার ইজ্জত। আমি যা বলেছি স্পষ্ট করেই বলেছি। আমি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলতে চাই। আমার পরিবারের প্রতি, মৌসুমীর প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধা আছে। আমার ছেলেমেয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে।
সে যা বলেছে, কী ভেবে বলেছে, আই ডোন্ট নো। এ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে একটু দূরত্ব তো চলছিল। কিন্তু আপনারা ভালো জানবেন, ফোন রেকর্ড অনুযায়ী তার সাথে আমার ফোনেও কথা হচ্ছিল না। আমি তার ব্যাপারে মন্দ কথা, খারাপ কথা কিছুই বলব না। কারণ সে স্টিল নাউ আমার স্ত্রী। আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ আছে জায়েদ খান যে মৌসুমীকে ডিস্টার্ব করেছে। ফারদিন বলুক আর ফাইজা বলুক তাদের মায়ের সম্পর্কে। আমার ছেলেমেয়েরা কথা বলুক এ বিষয়গুলো নিয়ে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। আমি কিছু বলতে চাই না।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বাদ যাননি এই তারকা দম্পতির ছেলে ফারদিন এহসান। তিনি বলেন, শুধু আম্মুকে (মৌসুমী) নয়, উনি (জায়েদ খান) কমবেশি সবাইকে ডিস্টার্ব করেন। আমার আব্বুর সাথেও বেয়াদবি করেছেন। আম্মু ভেবেছিলেন, বিষয়টি খুবই সামান্য, এটা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক।
ফারদিন আরো বলেন, তিনি (জায়েদ খান) আমার ব্যবসারও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন। আমি বিষয়গুলো জানি, কিন্তু পাবলিকলি সব বলব না। উনাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ব এমন না। উনাকে এত গুরুত্বও দিচ্ছি না। জায়েদ খান আর রাস্তার ব্যাঙ এক কথা! তাই উনাকে নিয়ে ভাবছি না।
মৌসুমীর সাথে সানির সম্পর্কের অবনতি এটা নতুন নয়। এর আগে আম্মাজানখ্যাত নায়কের সাথে তার সম্পর্কের সূত্রে সংসারে অশান্তির সূচনা হয়। এরপর আরেকজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সাথেও তার সম্পর্ক নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় আলোচনা আছে।