চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থেকে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া শিশুকন্যা আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) লাশ আজ সকালে উদ্ধার করেছে পিবিআই। আট দিন আগে শিশুটি নিখোঁজ হলে মামলা নেয়ার জন্য ছয় দিন ধরে থানায় ঘুরেছে তার পরিবার। তারপরও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে নিহত শিশুর পরিবার অভিযোগ করেছে।
লাশ উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী শিশুর মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম, রুবেল আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে, রুবেল নাকি ভালো ছেলে! রুবেল এ কাজ করতে পারেন না। তোমার মেয়ে প্রেম করে! আমার ১০ বছরের মেয়ে কিভাবে প্রেম করে? আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমার মেয়ের কাপড় পড়বে কে? বেতন পেলে আমার মেয়েকে মিষ্টি-সন্দেশ কিনে দিতাম। এখন কাকে কিনে দেবো? আমার একমাত্র মেয়েকে রুবেল এভাবে হত্যা করল!’
গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিড়ালছানা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু আয়নী। এ ঘটনায় তার মা গতকাল (২৮ মার্চ) আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ এখনো থানায় এসে পৌঁছায়নি। এরইমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শিশু আয়নীর লাশ উদ্ধার করেছে।
আয়নী স্থানীয় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। নগরের পাহাড়তলী থানার কাজীর দীঘি এলাকায় পরিবারের সাথে থাকত।
ধর্ষণের পর খুন
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত রুবেলকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে।
পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ২১ মার্চ বিড়াল ছানা দেবে বলে আয়নীকে দেখা করতে বলেন রুবেল। এরপর তাকে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিজের ফুফুর বাসায় নিয়ে যান। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ঘটনা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় আয়নীকে গলা টিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন রুবেল। পরে রাত ৯টার পর একটি বস্তায় ভর্তি করে তরকারির গাড়িতে ত্রিপল আবৃত করে পাহাড়তলী থানার ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডস্থ মুরগী ফার্ম বাজার সংলগ্ন আলম তারা পুকুরের ডোবায় ফেলে আসেন। একই দিন রাত ১০টার পর শিশুটির পরিহিত কাপড়, পায়জামা ও স্যান্ডেল কনকা সিএনজি ষ্টেশনের দক্ষিণ পাশে নালায় ফেলে দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা পুলিশের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শুনার পর যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোররাতে মুখ খুলেন তিনি।