আর মাত্র এক দিন পরই কোরবানির ঈদ। তাই শেষ মুহূর্তে বরগুনার বেতাগী উপজেলার পশুর হাটগুলোতে চলছে বেচাকেনার ধুম। হাটগুলোতে উঠছে হাজার হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ। সেইসাথে হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার ঢল নেমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং পশু মোটাতাজাকরণে খরচ বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় পশুর দাম বেশি হাঁকছেন তারা।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা এবার চড়া দাম হাঁকিয়ে বসে রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী গরু-ছাগল কিনতে হাটের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরছেন তারা।
উপজেলার কাজিরহাট গরুর হাটে আজ শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে ক্রেতারা। সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি দিতে নিজেদের প্রিয় পশুটি কিনতে হাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরছেন ক্রেতারা। এই হাটে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার দামের ছোট ও মাঝারি ধরণের গরু দিকে ছুটছেন বেশিভাগ ক্রেতারা। দেড় লাখ টাকার অধিক দামের গরু কিনছেন শরিক হয়ে। এই পশুর হাটে বিপুল সংখ্যক গরু, মহিষ ও ছাগল বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। চলছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি। একদিকে পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় যেমন পশুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজেট কম হওয়ায় পশুর মূল্য কম হাঁকছেন ক্রেতারা। তবে, সবকিছুর পরেও নিজেদের পছন্দমতো পশু কিনে পরিবারের সাথে কোরবানি দিতে চান ক্রেতারা। এদিকে ঈদের আগ পর্যন্ত সময়ে ভালো বিক্রির আশা বিক্রেতাদের।
গরুর বাজার তদারকিতে মাঠে রয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা। কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনেপশু ক্রয় বিক্রয়, পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মনিটরিংয়ের জন্য ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, এবছর উপজেলার বিবিচিনি, বেতাগী পৌরসভা, কাজির হাট, হোসনাবাদ, কালিকাবাড়ি, চান্দখালী, কুমড়াখালী ও সরিষামুড়িসহ আটটি স্থানে স্থায়ী কোরবানির
পশুহাট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বেতাগী পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খামারের মালিক নাসির উদ্দিন পিযুস বলেন, এ বছর দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজা করতে অনেক টাকা খরচ করেছি। তাই কোরবানির হাটে পশুগুলোর দাম একটু বেশি রযেছে। ছোট গরু বিক্রি হয়েছে কিন্তু বড় গরুগুলো বিক্রি করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
পৌর শহরের গরুর হাটের বিক্রেতা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি পাঁচটি ছোট গরু নিয়ে এসেছি। ক্রেতারা দামাদামি করে পাঁচজনই চলে যায়। সবাই বলে, দাম বেশি চেয়েছি। গরু পালন করতে এবার গোখাদ্য দাম বেশি ছিলো বলেই গরুর গতবারের চেয়ে একটু দাম বেশি। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, তবে শেষ পর্যন্ত দেখি কপালে কী আছে?
বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু বেশি আছে। কৃত্রিমভাবে পশু মোটা তাজাকরণ ও রোগাক্রান্ত পশু বাজারে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য আমাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে পশুর বাজারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে মানুষ পশু ক্রয়-বিক্রয় করে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারে সেজন্য থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে এবং জাল টাকার সাপ্লাই রোধেও পুলিশ তৎপর রয়েছে।