ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতার খাতামুন নবি হজরত মুহাম্মদ (স) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে গোটা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ভারতের কূটনীতিক টানাপড়েন প্রকট হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টি দেশ বিতর্কিত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ভারতকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর এনডিটিভি ও বিবিসি।
সম্প্রতি বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দলটির দিল্লি মিডিয়া প্রধান নভিন কুমার জিন্দালের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে সংকটের সূত্রপাত হয়। নূপুর শর্মা একটি টেলিভিশন বিতর্কে ওই মন্তব্য করার পর টুইটারে বিষয়টি আরও উসকে দেয়। এরপর দুই নেতাই প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। নূপুরের সদস্যপদ স্থগিত এবং নভিন কুমারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উপসাগরীয় দেশ কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইনের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মালদ্বীপ, জর্ডান লিবিয়া ভারতের ক্ষমতাসীন দলের তীব্র সমালোচনা করেছে। কুয়েতের বাজারে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। ইরান, কুয়েত এবং কাতার এ ঘটনায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। সৌদি সরকার দিল্লির কড়া সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে গতকাল এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ইরাক, ইরান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাহরাইন, মালদ্বীপ, লিবিয়া, তুর্কি ও ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ভারত সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার।
চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লির কূটনীতিকরা বসে নেই। ইতোমধ্যে তারাও মুখ খুলতে শুরু করেছে। কাতারে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল বলেছেন, ‘বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যক্তির’ মন্তব্য ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করেন না। অন্যদিকে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি) ভারতের সমালোচনা করেছে। যদিও দিল্লি ওআইসি সমালোচনাকে খারিজ করে দিয়েছে। দিল্লি বলছে এসব মন্তব্য ‘অবাঞ্ছিত ও সংকীর্ণ চিত্তের’। পাকিস্তানের সমালোচনাও একই ভাষায় নাকচ করেছে দিল্লি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইতোমধ্যে সংকট বেশ ঘনীভূত হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে হবে। না হলে আরব বিশ্ব ও ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অবনতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
কেননা, উপাসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সদস্য কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান এবং ইউএই-এর সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২০-২০২১ সালে জিসিসির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলার। শুধু কূটনীতিক সম্পর্কই নয়। ভারতের অভ্যন্তরেও ধর্মীয় বিভাজন বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এখনই যদি দলটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না গ্রহণ করে তা হলে সেই মুসলিম বিদ্বেষের তকমা আরও প্রকট হবে- তা সহজেই অনুমেয়।