আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন মনোনয়নপ্রত্যাশী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় মুখর।
গত ৬ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল ও শোভাযাত্রা নিয়ে আসছেন ঢাকার বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে। প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ফরম সংগ্রহ করছেন, আর সঙ্গে রয়েছেন পরিবার ও সমর্থকেরা।
দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, ফরম বিতরণের প্রথম চার দিনেই প্রায় দেড় শতাধিক মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই এনসিপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হেভিওয়েট প্রার্থী ফরম নেননি বলে জানা গেছে।
উচ্ছ্বাসে ভরপুর প্রার্থীরা
রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারের ১৫ তলায় অবস্থিত এনসিপি কার্যালয়ে প্রতিদিনই নির্বাচনি আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত, কেউবা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী আসাদুল ইসলাম মুকুল নিজের চার বছরের ছেলে আবরার শাহরিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ফরম সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, “জীবনে প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি, এটি এক অন্যরকম অনুভূতি।”
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কচকাটা) আসনের প্রার্থী মো. হাফিজুর রহমান খান জুয়েল বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিলাম। জনগণের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েই নির্বাচনে নামছি। আশা করি, নতুনদের পক্ষে জনগণ রায় দেবে।”
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড়, হেভিওয়েট প্রার্থীর অভাব
সাধারণত নতুন রাজনৈতিক দলগুলোতে অন্য দলের হেভিওয়েট নেতাদের মনোনয়ন নেওয়ার আগ্রহ দেখা যায়। তবে এবার এনসিপির মনোনয়ন ফরম নিতে বড় কোনো পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দেখা মেলেনি।
তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত স্ক্যানিং না করা পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা সম্ভব নয় কারা ফরম নিয়েছেন। রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা ফরম নিয়েছেন—
নওগাঁ থেকে যুগ্ম সদস্য সচিব মনিরা শারমিন
লালমনিরহাট (আদিতমারী) থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠক রাসেল আহমেদ
খাগড়াছড়ি পার্বত্য আসনে কেন্দ্রীয় নেত্রী মঞ্জিলা ঝুমা
এছাড়া নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে রাজশাহী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর এস এম জার্জিস কাদির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তিনি নাটোর জেলা এনসিপির সদস্য সচিব এবং স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল্লাহ হায়দার জানান, “প্রতিদিনই দেশজুড়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় বাড়ছে। বিভিন্ন পেশার জনপ্রিয় প্রার্থীরা ফরম নিচ্ছেন। আশা করছি, এই নির্বাচনে এনসিপি শক্ত অবস্থান তৈরি করবে।”
শীর্ষ নেতারা এখনো ফরম নেননি
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অনেক শীর্ষ নেতা এখনও মনোনয়ন ফরম নেননি।
তাদের মধ্যে রয়েছেন—
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (ঢাকা-১৮)
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ (নোয়াখালী-৬)
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪)
উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১)
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব (ঢাকা-১৪)
যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার (নরসিংদী-২)
সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা (ঢাকা-৯)
যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ (সিরাজগঞ্জ-৬)
কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন শিশির (কুমিল্লা-১০)
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম বলেন, “শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনো ফরম নিতে পারেননি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তারা মনোনয়ন ফরম নেবেন।”
মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময়
এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। প্রার্থীরা ১৩ নভেম্বরের মধ্যে ফরম জমা দিতে পারবেন।