প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হয়ে একটি বিশেষ দলের স্বার্থ গুরুত্ব পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ সময় সরকার ফাঁদে পা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) মগবাজারে ইসলামী আট দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট ও অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে অপসারণসহ তিন দাবি জানানো হয়েছে।
দাবিগুলো হলো- ভিন্ন ভিন্ন দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ঘোষণা, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে, প্রশাসনের রদবদলে নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতার আওতায় থাকতে পারে-এমন মনোভাবের লোকদের নিয়োগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সেটা উপেক্ষা করা হয়েছে। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’
তিনি বলেন, ‘একটি দল শুরু থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের বিরোধিতা করেছে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হয়ে একটি বিশেষ দলের স্বার্থ গুরুত্ব পেয়েছে। এই ভাষণের পর গণভোটে জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতায় ফেলে দিলো।’
ঐকমত্যে কমিশনে নানা সিদ্ধান্তে ৯০ শতাংশ দল একমত হলেও একটি দলকে গুরুত্ব দিতে প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে পাশ গেছেন বলে অভিযোগ করেন ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো একটি দলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় গণভোট নিয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট হলে দলটির চিন্তা চেতানার বিপরীতে যাবে। সে আশঙ্কা থেকে বলছে গণভোট হলে জীবনেও মানবে না। কিন্তু সরকার তাদের দাবির ওপর নতি স্বীকার করে একই দিনে গণভোট করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।’
‘কারণ নির্বাচনের দিন নিজ দলের পক্ষে ভোট পাওয়ার জন্য সবাই মনোযোগী হবে। পরে গণভোটে ভোট কম পড়লে, যারা সংস্কার চাচ্ছে না তারাই বলবে- এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। আমরা মনে করি এটা একটা ফাঁদ। বুঝে হোক আর না বুঝে হোকে সরকার সেই ফাঁদে পা দিয়েছে,’ যোগ করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।
এ সময় তিনজন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল বুঝিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পথ রুদ্ধ করছে বলেও অভিযোগ করেন তাহের। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তিনজন উপদেষ্টা। তাকে ভুল বুঝিয়ে একটি বিশেষ দলকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
জনগণ গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি। সম্প্রতি প্রশাসনে যে রদবদল হচ্ছে সেখানেও একটি দলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আট দলসহ আরও কিছু দল চাই, ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে নির্বচন সফল হক। এর জন্য আমরা মাঠে কাজ করছি। কিন্তু যেই কারণে জনগণ ১৫ বছর ভোট থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, আবারও সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে। আরেকটি পরিকল্পিত নির্বাচন হতে যাচ্ছে কি না, তা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
এই সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ডা. তাহের।