শুক্রবার, ১০:৫৬ অপরাহ্ন, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

ডলারের প্রবাহ বাড়ায় আমদানিতে গতি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১২ বার পঠিত

বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় আমদানিতে গতি ফিরতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। আরেকটি বিষয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলসির প্রবৃদ্ধি উৎপাদনশীল খাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। যদিও একই সময়ে পোশাক খাতের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা কমেছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তীব্র ডলার সংকটের কারণে আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার ফলে সার্বিক আমদানির গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডলার সংকট নিরসনে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলায়। তবে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্যের আমদানি যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান আমাদের সময়কে বলেন, বাজারে ডলার সরবরাহ এখন স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকগুলো তুলনামূলক সহজে এলসি খুলতে পারছে। আরেকটা বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে ডলারের বিনিময় হারও স্থিতিশীল রয়েছে। এলসি খোলা বেড়ে যাওয়ার এটাও আরেকটা কারণ হতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার

মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সব সময় থাকবে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এলসি খুললেও পণ্য দেশে আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলারের সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে এলসি খোলার প্রবণতা নিম্নমুখী ছিল। তবে চলতি বছর বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি ঋণের প্রাপ্তি এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) উভয় ক্ষেত্রে টানা প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা এসেছে। আবার জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় ছিল সেটাও কেটে গেছে। ফলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ নতুন কারখানা স্থাপন ও বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খুলে রাখছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে- চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন পণ্যের সার্বিক এলসি খোলা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৯৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে সার্বিক এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলার। একই সময়ে আমদানি এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ০৩ শতাংশ। এর অর্থ শুধু এলসি খোলা নয়, পণ্য আমদানির প্রকৃত কার্যক্রমও বাড়ছে। যদিও একই সময়ে পোশাক খাতের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা কমেছে প্রায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে ব্যাক টু ব্যাক এলসির নিষ্পত্তি ১ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের পোশাক খাতের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা বাড়েনি, উল্টো আগের চেয়ে কমেছে। আমার ধারণা, রোজা ও ঈদ সামনে রেখে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের এলসি খোলার সংখ্যা বাড়ায় সার্বিক এলসি খোলায় প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা ২২ শতাংশ বেড়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অন্য খাতের ব্যবসায়ীরা মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খুলতে পারেন। তিনি জানান, বর্তমানে পোশাক খাতে নতুন কারখানা স্থাপন খুবই কম হচ্ছে। তবে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে কিছু কিছু কারখানায় পুরনো যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।

মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলায় বড় প্রবৃদ্ধি : মূলধনী যন্ত্রপাতি সাধারণত নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ কিংবা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পণ্যটির এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। যদিও এ সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি কমেছিল ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, হঠাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন সম্প্রসারণের সম্ভাবনা বাড়ছে, যা বিনিয়োগ প্রবাহের ইতিবাচক সংকেত।

অন্যান্য পণ্যের এলসিও ইতিবাচক ধারায় : চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। একই সময়ে খাদ্যপণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের আমদানি এলসি খোলা বেড়েছে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে আলোচ্য পণ্যগুলোর এলসি নিষ্পত্তি কমেছে যথাক্রমে- ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ১১ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

প্রবাসী আয়, রপ্তানি ও রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে (১ জুলাই-১৫ অক্টোবর) রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৯০০ কোটি (৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় এসেছে ১ হাজার ২৩১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। ফলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বাজার থেকে নিয়মিত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় ২১২ কোটি ডলার কিনেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com