মঙ্গলবার, ০২:২৬ অপরাহ্ন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

নতুন সংকটে সাত কলেজের ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে জটিলতা আরও প্রকট রূপ নিয়েছে। এই ইস্যুতে এবার শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা মুখোমুখি। গতকাল সোমবার দিনভর এ নিয়ে রাজধানী ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশের সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা। অন্যদিকে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দ্রুত অধ্যাদেশে দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে তা স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণে আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যেসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সাত কলেজ ইস্যুতে জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। দুই পক্ষের অবস্থান বিপরীতমুখী হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল রাজধানীতে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক ও সাত কলেজে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকা কলেজের কর্মসূচি চলাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক। এর প্রতিবাদে দেশের সব সরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালোব্যাজ ধারণ ও কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আজ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। কর্মবিরতির মধ্যেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের পরীক্ষা যথারীতি চলবে জানালেও রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আর সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের অধ্যাদেশের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ করার আশ্বাস পেয়ে রাতে শিক্ষার্থীরা আজকের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সচিবালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানজীমুল আবিদ। তিনি ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তানজীমুল আবিদ জানান, শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তাদের নিশ্চিত করা হয়েছে অধ্যাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। তবে অধ্যাদেশের কাজ বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে, যা সবচেয়ে বেশি সময়সাপেক্ষ। তানজীমুল আবিদ বলেন, ‘এখন সবচেয়ে সময়-সাপেক্ষ কাজ হচ্ছে, ৬ হাজার ই-মেইল যাচাই। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জমা হওয়া প্রায় ৬ হাজার ই-মেইল যাচাই করতে সময় লাগছে মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কারণে এ কাজের জন্য লোকবল দুজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন করা হয়েছে। এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা। প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষক, দেড় লাখ শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এই আলোচনা শেষ করতে তিন-চার দিনের বেশি সময় লাগবে।’

এর আগে রাজধানীর সাত কলেজ—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কলেজের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত অধ্যাদেশ জারি ও দ্রুত এর ক্যাম্পাস স্থাপন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।

এদিন দুপুরে ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সাত কলেজ ইস্যুতে সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দুটি পৃথক কর্মসূচি পালন করছিল। একটি দল শিক্ষা ভবনের দিকে লং মার্চে যাচ্ছিল, অন্যদিকে আরেকটি দল প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে কলেজের কাঠামো ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থানের প্রতিবাদে শহীদ মিনারের দিকে অভিযাত্রার আয়োজন করে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা ছিল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই শিক্ষকরা সকাল থেকেই ভিজিল্যান্স টিম হিসেবে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী কলেজের উপাধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে তাকে হুমকি দেয়। এ সময় ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তৌহিদুর রহমান শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এরপর কিছু বহিরাগত ও উসকানিদাতা শিক্ষার্থী কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পিছু হটে। পরে পুলিশ এসে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com