সোমবার, ০৫:২৩ অপরাহ্ন, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
এস এম মনিরুজ্জামান মনির বাউরগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানি শুরু ২৪ আগস্ট ১৮ বছর আগে বরখাস্ত হওয়া ৩২৮ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ নতুন বিতর্কের মুখে জুলাই শহীদদের ফ্ল্যাট প্রকল্প জুলাই হত্যাযজ্ঞ : শেখ হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ ডিবির হারুনসহ পুলিশের ১৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত মহীউদ্দীন আলমগীরের ৪শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক : আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ক্রিমিয়া ও ন্যাটো ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বার্তা ফাঁসকারী সেই পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, নিহত ৫

মহীউদ্দীন আলমগীরের ৪শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান (মখা) আলমগীর, তার পরিবার এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৭৯টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। এসব হিসাবে জমা ও উত্তোলন মিলে অন্তত ৪২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। ফারমার্স ব্যাংকের তৎকালীন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতির হিসাব থেকেও তার হিসাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমা হয়েছে।

পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ দিয়ে তিনি ও তার স্ত্রীর নামে অন্তত ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। বর্তমানে তাদের হিসাবগুলোতে মাত্র ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার স্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মখা আলমগীর এসব অর্থ উপার্জন করেছেন বলে সন্দেহ বিএফআইইউর। তার আয়কর নথিতে এসব অর্থ প্রদর্শন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিবেদনটি সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছেও পাঠানো হয়। এতে তার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত লেনদেনগুলোর বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান ও তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এএফএম শাহীনুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপির ব্যাংক হিসাবের তথ্য খতিয়ে দেখেছে বিএফআইইউ। এ তালিকায় মখা আলমগীরও আছেন। তার বিষয়ে যেসব অসঙ্গতি পাওয়া গেছে, সেটা নিয়ে আরও অনুসন্ধানের জন্য প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে তাদের হিসাবগুলো অবরুদ্ধ আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবুল চিশতি ব্যাংকটির অডিট কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চেয়ারম্যান ছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তখন ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতিসহ সব অপকর্মের সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে মখা আলমগীর, বাবুল চিশতি ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতির ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের প্রতিফলন রয়েছে। এ দুজনের ব্যাংক হিসাব হতে মখা আলমগীর বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে নিজ নামে ও স্ত্রী সেতারা আলমগীরের নামে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া মখা আলমগীর ও তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে অজ্ঞাত উৎস হতে জমাকৃত অর্থ থেকে ২৩ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়, যা তাদের আয়ের উৎস ও পেশার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে অনুমোদন পায় ফারমার্স ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন মখা আলমগীর। কার্যক্রম শুরুর পর নজিরবিহীন ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে চার বছর না যেতেই মুখথুবড়ে পড়ে ব্যাংকটি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ অনুমোদন, অনুমোদনের আগেই ঋণ ছাড়, ঋণ দিতে বিপুল অঙ্কের কমিশন গ্রহণ, ব্যাংকের শেয়ার ও নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে। তাকে এই কাজে সহায়তা করেন বাবুল চিশতি, যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনেও উঠে আসে। এ পরিস্থিতিতে মখা আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতি ব্যাংকটির পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

এ ছাড়া তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শামীমকেও অপসারণ করা হয়। এর পর ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সিদ্ধান্তে মালিকানায় যুক্ত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এতে ব্যাংকটির ৬৫ শতাংশ শেয়ার সরকারি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যায়। সেই সুবাদে ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত হন ওই চার ব্যাংক ও আইসিবির প্রতিনিধিরা।

২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এর পরও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এই ব্যাংকের লাখ লাখ গ্রাহক তাদের জমানো টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। ব্যাংকে বর্তমানে মখা আলমগীরের ২.৫০ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

পদ্মা ব্যাংকে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান। মখা আলমগীরের শেয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, তার কি পরিমাণ শেয়ার আছে সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। পরবর্তী পর্ষদসভার আগেই খোঁজ নেব। সেই সঙ্গে বিগত সময়ের ঋণ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক পরিচালকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, সেটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের প্রায় ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে পাচারের অভিযোগে বাবুল চিশতি ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতিকে ১২ বছর কারাদ- দেওয়া হয়। তারা এখন জেলে। আর মখা আলমগীর বর্তমানে পরিবারসহ আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তার বক্তব্য জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের অক্টোবরে ফারমার্স ব্যাংকের জামালপুরের বকশীগঞ্জ শাখা থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

কার নামে কত হিসাব ও লেনদেন : মখা আলমগীরের নিজ নামে ২১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়ী ১৩টি, স্থায়ী ৫ ও চলতি হিসাব ৩টি। এসব হিসাবে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমাসংক্রান্ত ৭৭ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার এবং উত্তোলনসংক্রান্ত ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। স্ত্রী সিতারা আলমগীরের নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়ী ৪টি, স্থায়ী ২৮টি ও চলতি হিসাব ১টি। তার হিসাবগুলোতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমাসংক্রান্ত ১২ কোটি ৩৩ লাখ এবং উত্তোলনসংক্রান্ত ৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মখা আলমগীর ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ব্যবসার নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়ী ৪টি, স্থায়ী ২৪টি ও চলতি ১টি। হিসাবগুলোতে প্রায় ১৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে জমাসংক্রান্ত ১৩৫ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার এবং উত্তোলনসংক্রান্ত ১৩৫ কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে বিএফআইইউ কর্তৃক তাদের ৩৩টি হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, যাতে মোট ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার স্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে মখা আলমগীরের হিসাবে স্থিতি রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

চলতি হিসাবে যত সন্দেজনক লেনদেন : মখা আলমগীরের নামে যমুনা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি চলতি হিসাব রয়েছে, যার নং ১০০১০০০১২১৬৩৩। এই হিসাবে মাহবুবুল হক চিশতির যমুনা ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১১ সালের ২৩, ২৬, ২৭ ও ২৮ জুনে ৪টি চেক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৮ কোটি টাকা জমা হয়। একই শাখায় পরিচালিত রাশেদ এন্টারপ্রাইজের হিসাব হতে ওই বছরের ২৭ জুনে ২.২০ কোটি ও বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্সের হিসাব হতে ১.৩০ কোটি টাকা জমা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যাংক হিসাবের কেওয়াইসির তথ্য বলছে, রাশেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুল হক চিশতি এবং বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্সের মালিক মাহবুবুল হক চিশতির পুত্র রাশেদুল হক চিশতি। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়ার গুলশান শাখা হতে ৮০ লাখ ও প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা হতে ১ কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে হিসাবটিতে ২০১১ সালে ১৪ ডিসেম্বর ৫০ লাখ এবং ২০১২ সালোর ২৮ জুন ২.৫০ কোটি টাকা নগদে জমা হয়।

অন্যদিকে মাহবুবুল হক চিশতির হিসাবে নগদ ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে ২০১১ সালের ১২ জুন হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা জমা এবং সমপরিমাণ অর্থ উত্তোলিত হয়। একইভাবে বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্সের হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা জমা, রাশেদ এন্টারপ্রাইজের হিসাবে ৫০ কোটি জমা করে সন্দেহজনকভাবে লেনদেন করা হয়। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থ হতে যমুনা ব্যাংক গুলশান শাখায় মোহাম্মদ গোলাম রসুলের নামে পরিচালিত হিসাবে ৬ কোটি, রাশেদুল হক চিশতির নামে একই ব্যাংক শাখায় পরিচালিত হিসাবে ২.৭০ লাখ, মখা আলমগীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলবাহার হিমাগার নামীয় ব্যাংক হিসাবে (সিটি ব্যাংক, গুলশান অ্যাভিনিউ শাখা) ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে মখা আলমগীরের হিসাবটি হতে মাহাবুবুল হক চিশতি ও রাশেদুল হক চিশতি কর্তৃক ৯.৮০ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। গোলাম রসুল নামীয় ব্যাংক হিসাবের কেওয়াইসি অনুযায়ী হিসাবটির নমিনি রাশেদুল হক চিশতি এবং জমাকৃত অর্থ একই দিনে ১.৫০ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন এবং ৪.৫০ কোটি টাকা রাশেদুল হক চিশতির মালিকানাধীন বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্সের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া মোহাম্মদ গোলাম রসুলের হিসাবটিতে মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানে ১৫ কোটি টাকা জমা করে একই সময়ে উত্তোলন করা হয়।

নিয়মানুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিএফআইইউর কাছে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম প্রতিবেদন (এসএআর) পাঠাতে হয়। একইভাবে ১০ লাখ টাকার ওপরে যে কোনো ধরনের লেনদেন হলে তা নগদ লেনদেন প্রতিবেদন (সিটিআর) হিসেবে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু তখন ব্যাংকগুলো থেকে এসব লেনদেনের কোনো রিপোর্ট করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপত্র মো. আরিফ হোসেন খান আমাদের সময়কে বলেন, কোনো হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) হলে সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে রিপোর্ট না করা পর্যন্ত বিএফআইইউ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে জানা সম্ভব না। এ কারণেই সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিংয়ের নিয়ম চালু করা হয় এবং তা পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে কি কারণে ব্যাংকগুলো তখন রিপোর্ট করেনি, তার জবাব তারাই দিতে পারবে।

দুর্নীতির টাকায় ছয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান : ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই ও তদন্তকালে মখা আলমগীর পরিবারের ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে বিএফআইইউ। এগুলো হলো- শুভ অটো রাইস মিল, সুলতানা ফিলিং স্টেশন, মেসার্স সুলতানা ওয়েল মিল, গুলবাহার হিমাগার লিমিটেড ও সুলতানা ফাউন্ডেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ৩২.৯১ কোটি টাকা নগদ জমা এবং ১৯.৬১ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। নগদে জমা ও উত্তোলনের ভাউচারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাঁদপুর কচুয়া ব্যাংক শাখার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ঢাকার বনানী ও গুলশান ব্যাংক শাখায় লেনদেন করা হয়েছে।

বিএফআইইউ বলছে, আলোচ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাঁদপুরে অবস্থিত হলেও নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন ঢাকার গুলশান ও বনানীতে সংঘটিত হয়েছে, যা সন্দেহজনক। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রকৃতি, ধরন ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নগদ অর্থ লেনদেন ছাড়াও হিসাবগুলো হতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অসংখ্য লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার প্রকৃত উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

স্ত্রী ও তার অন্যান্য হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন : মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও তার স্ত্রীর ব্যক্তিগত নামে পরিচালিত হিসাবগুলোতে নগদে ৬.৭২ কোটি জমা এবং ১৩.৩০ কোটি নগদ উত্তোলিত হয়েছে। এসব নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে মো. মাহেদুল আলম খান, মোস্তফা কামাল, শামীম, মাসুদুল ইসলাম, আনান আশেক আরিফিন, মো. হাসান মজুমদার, মো. শাহজাহান, মো. রুবেল, শরীফ মো. কামাল হোসেন, মীর আল আমিন ও মো. আহাদ হোসেনের নাম উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com