শনিবার, ০৪:১৬ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
জুলাই সনদের প্রশ্নে বিএনপির বিরোধিতা জামায়াত ও এনসিপির, সংকট কোথায়? বড় কিছু ঘটার অপেক্ষায় : শাকিব খান রাজশাহীতে ১২ প্রকল্পের উদ্বোধন উপদেষ্টা আসিফের আগামীতে দেশ পরিচালনায় বিএনপির সম্ভাবনা বেশি, মানুষের প্রত্যাশাও বেশি-তারেক রহমান গাজীপুর : সাংবাদিক তুহিন হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া সাতজন গ্রেপ্তার: পুুলিশ কাদেরবিরোধীদের কাউন্সিল আজ, আবার ভাঙছে জাপা ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প-পুতিন মুখোমুখি বসছেন ১৫ আগস্ট, কিছু অঞ্চল বিনিময়ের ইঙ্গিত তারেক রহমানই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন স্বাধীন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কমিশন স্বল্প সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে: সিইসি

দুর্নীতির মামলা বেশি, গ্রেপ্তারে পিছিয়ে দুদক

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

দুর্নীতির অভিযোগে প্রতি মাসে গড়ে ৪২টি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে গড়ে প্রতি মাসে আসামি হচ্ছেন ১৬৪ জন। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুদকের মামলা দায়েরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেলেও আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির মামলায় দুদক নিজে গ্রেপ্তার না করে পুলিশের ওপর নির্ভর করছে।

দুদক থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে তিন শতাধিক মামলা দায়ের করেছে দুদক। এসব মামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। একই সময়ে প্রায় দুই শতাধিক মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব চার্জশিটে আরও ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

সব মিলে বর্তমানে কমিশনে অনুসন্ধান ও তদন্তাধীন পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। এসব অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে আসামির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে এসব আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজনকে। তবে কোনো আসামি যদি অন্যান্য মামলায় পুলিশ বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন, তখন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখায় (শ্যোন অ্যারেস্ট) দুদক।

দুর্নীতির মামলায় সম্প্রতি দুদক কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের মামলায় ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গত ১০ জুলাই অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপরদিকে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রায় দেড় শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দুদক শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে।

অতীতে দুদক কোনো কোনো বছর ৩০০ থেকে ৪০০ আসামি গ্রেপ্তার করার রেকর্ড রয়েছে। ২০২০ সালে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এক ভাষণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদকের গ্রেপ্তার ও হাজতখানায় আসামি হেফাজতে রাখার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। এর পর থেকে আসামি গ্রেপ্তার করা থেকে অনেকটা পিছু হটে দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রেপ্তারসংক্রান্ত দুদকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুর্নীতি অনুসন্ধানাধীন ও বিভিন্ন মামলায় ২০১৬ সালে ৩৮৮ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরের বছর ২০১৭ সালে ১৮২ জন, ২০১৮ সালে ৫৬ জন এবং ২০১৯ সালে ১২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। এর পর ২০২০ সালে ২৯ জন এবং ২০২১ সালে ৩১ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরের বছরগুলোতে আসামি গ্রেপ্তার থেকে অনেকটা দূরে সরে আসে দুদক।

যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২০ (৩) ধারা অনুসারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনের তফসিলভুক্ত অনুসন্ধান বা তদন্ত বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) একজন কর্মকর্তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া দুদক আইনের ২১ ধারায় গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কমিশনের কোনো কর্মকর্তার যদি বিশ^াস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে কোনো ব্যক্তি তার নিজ নামে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির মালিক বা দখলদার, যা তার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণÑ উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার হওয়ার আগেই অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আবশ্যক হলে কর্মকর্তা কমিশনের অনুমোদন নিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, দুর্নীতিসংক্রান্ত অনুসন্ধানাধীন কোনো অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের আগে কমিশনের পূর্বানুমতি লাগবে। কিন্তু বর্তমান কমিশন আসামি গ্রেপ্তারে অনেকটাই নিরুৎসাহিত করছে। দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পুলিশের মাধ্যমে করা হয়।

সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময় ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আসামি রাখতে দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজতখানা গড়ে তোলা হয়। পাশাপাশি আসামি গ্রেপ্তারে সহযোগিতা পেতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০ সদস্যের সশস্ত্র একটি পুলিশ ইউনিট দুদকে যুক্ত করা হয়। এখন আসামি গ্রেপ্তার না থাকায় দুদকের সেই হাজতখানা খালি পড়ে থাকে।

দুদকের আসামি গ্রেপ্তার ও হাজতখানা সম্পর্কে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, গ্রেপ্তার করতে হলে দুদককে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকেই বলতে হবে। দুদক নির্দেশ দিতে পারে। তারা হাজতখানা বানাবে, হাজতে আসামি রাখবে এটা দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ না। যার যার কাজ তার তার করতে হবে। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে।

সংস্থাটির তদন্ত পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, মূলত শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর আসামি গ্রেপ্তার ও হাজতখানায় রাখা থেকে দুদক অনেকটা দূরে সরে আসে। যদিও জেলহাজতে থাকা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে দুদকে আনা হয়। সেক্ষেত্রে আসামিকে দুদকের কাছে যথাযথভাবে হেফাজতে রাখার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব থাকে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, খুব প্রয়োজন মনে করলে আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। যেসব আসামি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে যেসব আসামি ও অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, তারা যদি নিয়মিত অফিস করেন, তা হলে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। গ্রেপ্তার কম হওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি (আসামি) গ্রেপ্তার হয়ে গেলে তার পরিবারের উপার্জনের পথটা বন্ধ হয়ে যায়। সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়।

সাবেক জেলা জজ এবং দুদকের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন উইংয়ের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম মনে করেন, দুদক আইনেই দুদককে আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার বা জব্দের ক্ষেত্রে দুদকের একজন তদন্ত কর্মকর্তা থানার ওসির সমান ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। অনুসন্ধান বা তদন্তের প্রয়োজনেই আসামি গ্রেপ্তার করতে হয়। যদি কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ না করেন, তা হলে কখনও কখনও দুর্নীতিবাজদের সাজা দেওয়ার লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া নিজেরা গ্রেপ্তার থেকে সরে এসে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়, তা হলে দুদক কর্মকর্তাদের সক্ষমতা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।

তবে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক আদালতের সাবেক বিচারক শাহজাহান সাজু বলেন, কথায় আছে, ধরি মাছ না ছুঁই পানি; Ñ দুদকও হয়তো এভাবেই চিন্তা করছে। আসামি গ্রেপ্তারে গিয়ে বদনামের ভাগীদার না হওয়ার জন্য, অথবা লোকবল কম থাকায় হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। তবে এতে দুদক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে কিনাÑ প্রশ্ন উঠতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com