বুধবার, ০৯:১২ অপরাহ্ন, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
আমাদের নেতা তারেক রহমানকে লক্ষ করে একটা গভীর ষড়ন্ত্র শুরু হয়েছে-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ রাজাকার আর স্বৈরাচার যেন একাকার হয়ে গেছে -জহির উদ্দিন স্বপন সেনাবাহিনীর এপিসিতে গোপালগঞ্জ ছাড়লেন হাসনাত-সারজিসরা ময়মনসিংহে ‘সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের’ বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ লীগের জঙ্গিরা গুলি করতেছে, সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ুন: আখতার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল এনসিপি সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গোপালগঞ্জ থেকে ‘বেঁচে ফিরলে’ মুজিববাদের কবর রচনা করেই ফিরব: সারজিস গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ‘অবরুদ্ধ’ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা

সোনালি মুরগিতে ক্ষতিকর ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

দেশের বাজারে প্রচলিত সোনালি মুরগির মাংসে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের (ই. কোলাই) উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। এ ব্যাকটেরিয়া মূলত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা ঠেকিয়ে দেয় বা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ ব্যাকটেরিয়াকে ঠেকানো যায় না। বাংলাদেশের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষকরা মিলে এ গবেষণা করেন। গবেষণাটি বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে ‘মলিকুলার ক্যারেক্ট্রারাইজেশন অব মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট অ্যান্ড এক্সটেন্ডেড- স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) প্রোড্রাক্টিং এশকারিসিয়া কোলাই আইসোলেটেড ফ্রম সোনালি চিকেন মিট ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে সোনালি মুরগির মাংস থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী এবং বর্ধিত স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের আণবিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ) শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, সোনালি মুরগির খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ও সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব প্রতিরোধ করা যায়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ই. কোলাই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। প্রাণী ও পানিতে ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি থাকে। তবে সোনালি মুরগিতে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মূলত মুরগির খাবারের মাধ্যমে। এ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা যাতে সহনীয় পর্যায়ে ব্যবহার হয়, তাহলে নিরাপদ হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী এবং পানিতে ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি রয়েছে। সাধারণত প্রাণীর পাকস্থলীতে ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি থাকে। তবে এ ব্যাকটেরিয়া মাংসের মধ্যে আসার কথা নয়। মুরগি জবাই করার পর প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় হয়তো মল থেকে বা অন্যকোনো উপায়ে ই. কোলাই মাংসে আসতে পারে। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়ারের ওপরে তাপমাত্রায় টিকে থাকে না। মুরগির মাংসে পাওয়া গেলও রান্নায় এর ক্ষতিকর দিক নষ্ট হয়ে যায়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।

জানা যায়, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ। এর মধ্যে বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী ও এক্সটেনডেড-স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ই. কোলাইয়ের মাধ্যমে মুরগির মাংস দূষণ জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। এক্সটেনডেড-স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ হলো এক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক, যা কিছু ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে থাকে। এই উৎসেচক তৈরি করার ফলে ব্যাকটেরিয়া বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিলিন এবং সেফালোস্পোরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। এর মানে হলো, এই এনজাইম উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর দ্বারা সহজে ধ্বংস হয় না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে সংগৃহীত কাঁচা সোনালি মুরগির মাংসের নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিটা-ল্যাকটাম রেজিস্ট্যান্স জিন বহনকারী বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী ই. কোলাই শনাক্ত ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা ছিল এই গবেষণার প্রধান লক্ষ্য। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৯০টি মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৮ দশমিক ২১ শতাংশ নমুনায় ই. কোলাই শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া এসব ই. কোলাইয়ের মধ্যে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাই এবং ৯২ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল নন-এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাই।

গবেষকরা ডিস্ক ডিফিউশন পদ্ধতিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ই. কোলাই উৎপাদিত এনজাইমের অ্যামপিসিলিনের বিরুদ্ধে শতভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া এরিথ্রোমাইসিনের প্রতি ৮৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোসপোরিনের প্রতিও উচ্চমাত্রায় প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে কম প্রতিরোধ পাওয়া গেছে অ্যামোক্সিসিলিন-ক্ল্যাভুলানেটের (৩ দশমিক ০১ শতাংশ) ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ৪১ দশমিক ৭৩ শতাংশ নমুনায় ইএসবিএল উৎপাদনের বিষয়টি শনাক্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নন-এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাই প্রকরণে ইএসবিএল উৎপাদনের হার আরও বেশি ছিল।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আহসানুল হক (রুকন) কালবেলাকে বলেন, এটার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার অন্যতম প্রধান কারণ। খামারিরা এখন সামান্য অসুখ হলেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন। অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন ভেটেরিনারি ডাক্তার। কিন্তু খামারিরা নিজের মতো কিংবা দোকানিদের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে প্রয়োগ করেন। আরেকটা বিষয় হলো, বাংলাদেশের অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর গুণাগুণ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একটা অ্যান্টিবায়োটিকে যে গুণাগুণ থাকার কথা, হয়তো সেগুলো নেই। এই গুণাগুণ আমাদের দেশে পরীক্ষাও হচ্ছে না। তাই সোনালি মুরগিতে এই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কমাতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র প্রয়োগ কমাতে হবে। পাশাপাশি মুরগি স্বাস্থ্যসম্মত জায়গা ও উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com