পুলিশ সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ বাস্তবায়নে গত ২২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর এরই মধ্যে ৯টি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সব ইউনিটে লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যেসব সুপারিশ দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর বিষয়েও পদক্ষেপ নিয়েছে সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি/স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে বলে পুলিশ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছিল। সেই অনুযায়ী মাঠ পুলিশকে রাতের বেলায় গৃহ তল্লাশি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মাঠ পুলিশও সেভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
আরেকটি বিষয় ছিল- থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।
এ ছাড়া ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে বলে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল। মাঠ পুলিশকে এই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর সব ইউনিটে লিখিত নির্দেশনা পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
আবার ‘বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না’ বলে পুলিশ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছিল। এরই মধ্যে এই সুপারিশ বাস্তবায়নে পুলিশের সব ইউনিটে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল চাকরিপ্রার্থীর বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা/শিক্ষা সনদপত্র/ট্রান্সক্রিপ্ট/ মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার দায়-দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। এগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডিএসবি ম্যানুয়াল সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছে সদর দপ্তর। এ ছাড়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে সদর দপ্তর। সে অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরুও হয়েছে।
মামলা দায়ের, রেকার বিল চার্জ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের সুপারিশ করে পুলিশ সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে বলে। কোনোক্রমেই জিডি গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা যাবে না বলেও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়। সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সব থানায় পর্যায়ক্রমে অনলাইন জিডির কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে আবেদনকারী সরাসরি না এসেও অনলাইনে জিডি করার সুযোগ থাকবে বিধায় জিডি প্রত্যাখ্যান বা জিডি করানোর বিনিময়ে অন্যায় সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা। আর মামলার এফআইআর গ্রহণে ‘কোনোরূপ অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না’ বলে কমিশন সুপারিশ করেছিল। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন এফআইআর চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে অনলাইন এফআইআর চালুর জন্য প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনীর প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল?্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশ সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে ও বিতর্কমুক্ত থেকে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে যে বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন তা হলো- মাঠপর্যায়ের পুলিশের সঙ্গে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সমন্বয় থাকা অপরিহার্য। চলতি সময়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ যে ধরনের নিরাপত্তা সংকটসহ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, তা নিয়ন্ত্রণে উপকরণসহ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা। এখানে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুলিশের একক প্রাধান্য থাকা অপরিহার্য, যা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারকাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে, সে আলোকে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।