জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলন ঘিরে অস্থিরতা, অতঃপর মহাসচিব বদলকে কেন্দ্র করে দলটিতে ফের দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরবিরোধী সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনাসভা অব্যাহত রেখেছেন। এসব আলোচনায় জিএম কাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের পর জিএম কাদের হত্যা মামলাসহ নানামুখী চাপে আছেন। তার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে জাপার অংশ নেওয়া কঠিন। ফলে বাধার দেয়াল ডিঙাতে জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গতকাল সোমবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক চারটি অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার মূল আয়োজন হয় রংপুরে ও ঢাকায়। রংপুরে স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জিএম কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির নতুন মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। অপরদিকে জিএম কাদেরবিরোধী দুটি অনুষ্ঠান হয়। দুপুরে রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভায় জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ), জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও জাতীয় পার্টি (মতিন) নেতারা একমঞ্চে এসে আবার ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গড়ার ঘোষণা দেন। এদিকে বারিধারায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট আয়োজিত এরশাদ স্মরণানুষ্ঠানে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে জিএম কাদেরের হাত থেকে বাঁচানোর আহ্বান জানান বিদিশা এরশাদ।
অন্যদিকে দেশের মানুষ একমাত্র জিএম কাদের ও জাতীয় পার্টিকে বিশ^াস করে বলে মনে করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মীর আব্দুস সবুর আসুদ। গতকাল
বিকালে কাকরাইলে এরশাদের স্মরণানুষ্ঠানে তিনি জাপাকে আরও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁঞা, আলমগীর সিকদার লোটন, মনিরুল ইসলাম মিলনসহ পঞ্চাশের অধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আজকের (সোমবার) স্মরণসভায় যে বৃহত্তর ঐক্যের কথা শুনছি, তা যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের এই অস্তির সময়ে দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে জাপাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। শেষ জীবনে আমাদের উচিত দেশকে কিছু দেওয়া। রুহুল আমিন হাওলাদারও ঐক্যবদ্ধভাবে জাপাকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উদ্দেশে জেপি মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আপনি বিভেদ ভুলে যান। ঐক্যের প্রক্রিয়ায় শামিল হন। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আজকে থেকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে চলব।
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি এক হন, যদি অল্টারনেটিভ শক্তি হিসেবে দলকে দাঁড় করাতে পারেন, তবে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, জনতা পার্টি বাংলাদেশ যদি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেয়েও যায়, তবুও আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে সবাই মিলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলব।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (রওশন এরশাদ) নির্বাহী সভাপতি কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী, সাবেক এমপি নাজমা আক্তার, অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, জাপার ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, খুলনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দলের এই অবস্থাতেও আলোচনায় নেই এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ। বয়স, অসুস্থতা ও দলের দ্বিধা-বিভক্তি- সব মিলিয়ে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক তিনি। দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, দলের বৃহৎ একটা অংশ রওশনকে ইচ্ছা করেই আলোচনার বাইরে রাখছে। এখন অন্যদিকে জিএম কাদেরকে সরাতে পারলেই এরশাদ পরিবারের বাইরে আসবে জাপা। এই চেষ্টা জোরালো হচ্ছে। এমন সুর জাপার সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর মুখেও শোনা যায়। পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের পারিবারিক রাজনৈতিক কবর রচনা হয়েছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর কথায় রাজনৈতিক দল পারিচালিত হবে না।