নোয়াব আলী বেপারী নামের এক প্রতারক আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সৌদি আববে গিয়ে সেখানে মানবেতর জীবন যাপনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রিদওয়ান আহাম্মেদ হৃদয় (২৮) নামের বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম শাওড়া গ্রামের এক তরুন।
প্রতারক ওই আদম বেপারী ও তার ছেলে শাকিল বেপারী মিলে শনিবার বিকেলে হৃদয়কে পিটিয়ে যখম করেছে। ভিডিও কলে এসে আহত হৃদয় তার পিতা-মাতা ও স্বজনদেরকে নির্যাতনের ক্ষত দেখালে তাদের মধ্যে হৃদয়ের জীবন নিয়ে উৎকন্ঠা তৈরী হয়। এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানাগেছে, উপজেলার দক্ষিন নাঠৈ গ্রামের মৃত আলামদ্দিন বেপারীর ছেলে সৌদি প্রবাসী প্রতারক আদম ব্যবসায়ী মোঃ নোয়াব আলী বেপারী ও তার ছেলে শাকিল বেপারীসহ পরিবারের সদস্যরা লোভনীয় বেতনের প্রলোভনে ফেলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী উপজেলার পশ্চিম শাওড়া গ্রামের মোঃ দেলোয়ার রনির একমাত্র ছেলে রিদওয়ান আহমেদ হৃদয়(২৮)কে সৌদি আরবের দাম্মাম এর হাইল এয়ারপোর্টের নিকটে বাঘা এলাকায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে গত ২৫ ফেব্রয়ারী থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত প্রতারক নোয়াব আলী ভিকটীম হৃদয়কে তার বাসায় রাখে। এ সময় প্রতি ২৪ ঘন্টায় তাকে একবেলা খাবার দেয়া হয়। তখন হৃদয় তার আকামা (রেসিডেন্স কার্ড) ও কাগজপত্র চাইলে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী নোয়াব আলী বেপারী ও তার ছেলে শাকিল বেপারী মিলে হৃদয়কে দুই দিনে দুই দফায় মারধোর করে।
এ অবস্থা দেখে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা হৃদয়কে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে অন্য একটি বাসায় নিয়ে তার থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর তারা অপর বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে হৃদয়ের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। মোবাইল ফোনে এ ঘটনা হৃদয় ও তাকে সাহায্যকারী প্রবাসীরা হৃদয়ের বাবাকে জানালে তিনি প্রতারকের গ্রামের সামাজিক নেতৃবৃন্দ জানিয়ে ছেলেকে রক্ষায় তাদের সহয়তা চান। ফলে সামাজিক চাঁপে পড়ে প্রতারক নোয়াব আলী গত ৩ এপ্রিল হৃদয়কে আকামা (রেসিডেন্স কার্ড) দেয়। এরপর গত ১০এপ্রিল নোয়াব আলী ও তার ছেলে শাকিল বেপারী হৃদয়কে ডেকে নিয়ে তার মোবাইল ফোনে এ্যাপ খুলে দেয়ার কথা বলে হৃদয়ের পাসপোর্ট, আকামা (রেসিডেন্স কার্ড), অন্যান্য কাগজ পত্র নিয়ে আটকে রাখে। গত ১১ এপ্রিল নোয়াব আলীর কাছে হৃদয় তার পাসপোর্ট, আকামা (রেসিডেন্স কার্ড) ও অন্যান্য কাগজ পত্র ফেরত চাওয়াসহ কফিলের মোবাইল নম্বর চায়।
এ কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে প্রতারক নোয়াব আলী ও তার ছেলে শাকিল মিলে হৃদয়ের বসবাসরত ভিলায় ঢুকে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর অতর্কিতে হামলা ও অমানবিক নির্যাতন চালায়। হৃদয়ের ডাক-চিৎকারে তখন ওই এলাকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। গুরুতর আহত হৃদয়কে তারা হাইল সিটি কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। হামলাকালে প্রতারক নোয়াব আলী ও তার ছেলে শাকিল বেপারী মিলে হৃদয়কে হুমকি দেয় যে, তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে হৃদয়কে ২০লক্ষ টাকা মুক্তিপন দিতে হবে। তা না দিলে তারা হৃদয়কে মেরে ফেলবে।
এ ঘটনার পর ভিকটীম তরুনের পিতা মোঃ দেলোয়ার রনি বাদি হয়ে প্রতারক নোয়াব আলী বেপারী, ছেলে শাকিল বেপারী, স্ত্রী ময়না বেগম, মেয়ে নিপা আক্তার ও নুসরাত আক্তারকে আসামী করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হামলা মারধর ও নির্যাতন ও মুক্তিপন চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নোয়াব আলী বেপারীর ছেলে শাকিল বেপারী ইমো কলে বলেন, তাকে মারধর করা হয়নি উল্টো সে আমার ওপর হামলা করে আমার নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। কোন প্রকার মুক্তিপন চাওয়া হয়নি। এ রকম কোন কাজ করার সুযোগ এ দেশে নেই। এ দেশের আইন অনেক কড়া। হৃদয় সব মিথ্যা অভিযোগ করছে।
ভূক্তভোগী তরুনের পিতা মোঃ দেলোয়ার রনি বলেন, আমার ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর আগে প্রতারক নোয়াব আলী বেপারী ও তার ছেলে শাকিল বেপারী, স্ত্রী ময়না বেগম, মেয়ে নিপা আক্তার ও নুসরাত আক্তার মিলে আমাকে বলে যে, সৌদি আরবে নোয়াব আলীর ভাড়াকৃত নিজের সবজি ও ফলের দোকান রয়েছে। ওই দোকানে আমার ছেলে রিদওয়ান আহাম্মেদ হৃদয়কে চাকুরী দিবে। চাকুরী কালিন সময় তার থাকা খাওয়া বাদে তাকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতন দিবে। তাদের প্রলোভনে পড়ে আমি আমার একমাত্র ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠাই। এখন আমি আমার ছেলের জীবন নিয়ে শংকিত। ছেলের জীবন রক্ষায় ও প্রতারকদের উপযুক্ত বিচারের জন্য আমি বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের সহয়তা কামনা করছি।