মঙ্গলবার, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

গৌরনদীতে বিএনপি’র দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ‍আহত ২০, মোটর সাইকেল ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ

গৌরনদী প্রতিনিধি :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩ বার পঠিত

ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, হামলা-পাল্টাহামলা, ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ৬ নারীসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার সমর্থকদের ৬টি মোটর সাইকেল ভাংচুরসহ একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে । ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, আহত নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপাসর্নের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহিরউদ্দিন স্বপনের নামে এলাকায় সাটানো পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিঙ্গলাকাঠি বাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের শিকদার বাড়িতে ও বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার উপর এ হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত দলের ৫ নেতাকর্মী ও সমর্থককে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৪ জন নেতা-কর্মীকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল শিকদার(২৮) তার স্ত্রী ইলমা ইয়াসমিন (২৪)কে সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে পিঙ্গলাকাঠী বাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে তার মামা আলম শিকদারের বাড়িতে ঈদের দাওয়াত খাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে ওই এলাকার জনৈক ব্যক্তির বাড়ির টিনের বেড়ার সাথে এম. জহির উদ্দিন স্বপনের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানানো একটি পোস্টার বেল্লালের স্ত্রী ইলমা ইয়াসমিন ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সেখান থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল মোল্লা। ঘটনাটি দেখে মোটর সাইকেল থামিয়ে সোহেল মোল্লা ইলমা ইয়াসমিনের কাছে পোস্টার ছেঁঢ়ার কারণ জানতে চান। এ নিয়ে ইলমা ইয়াসমিন ও সোহেলের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাঁধে। এক পর্যায়ে সোহেল উত্তেজিত হয়ে ইলমা ইয়াসমিনকে মারার জন্য তেঁড়ে আসে। ইলমার স্বামী বেলাল এতে বাধা দিলে, বেল্লাল ও সোহেলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরধরে যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার নেতৃত্ব ৮/৯টি মোটর সাইকেল যোগে যুবদলের ১৫/২০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা, রামদা, লোহার রড নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে পিঙ্গলাকাঠী বাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে আলম শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বেল্লালকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এ খবর পেয়ে বেলালের পক্ষ নেন নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধাারন সম্পাদক হারুন শিকদার। পরে হারুন শিকদারের নেতৃত্বে ওই বাড়ির ও বাজারের লোকজন বাড়ির সামনের রাস্তার ওপর জড়ো হয়ে আক্রমণকারী যুবদল নেতাকর্মীদের উপর পাল্টাহামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সামনা-সামনি সংঘর্সের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ওই বাড়ির সহ আশপাশের বাড়ির লোকজনসহ বাড়ির নারীরাও অংশ নেয়। ফলে ৬ নারীসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হয়। এ সময় সংঘর্ষের এক পর্যায়ে টিকতে না পেরে যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার সমর্থকরা ৭টি মোটর সাইকেল ফেলে দৌড়ে পিছু হটে। এরপর হারুন শিকদারের সমর্থকরা ওই ৫টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে বাড়ির পুকুরে ফেলে দেয় ১টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ফেলে  হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষে যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার সমর্থক নলচিড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক সুজন আকন (৪৫), যুবদল কর্মী আজিজুল সরদার (৪৮), সেলিম সরদার (৪৫), আল আমিন হাওলাদার(৩৫), মনির খলিফা(৪০), টিপু সুলতান (৩২) ও বিএনপি নেতা হারুন শিকদারের সমর্থক যুবদল কর্মী শহিদুল শিকদার (৪২), আজিজুল শিকদার (১৭), সেনা সদস্য মেহেদী হাসান (২৫), তাসলিামা বেগম (৪৫), ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শুভ শিকদার (২০), যুবদল কর্মী ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল শিকদার(২৮), মনজিলা বেগম (৬১), ইলমা ইয়াসমিন (২৪), জিয়াসমিন বেগম (৬১), শারমিন (৩০), শেফালী বেগম(৩০), ছাদ্রদল কর্মী আজিজুল শিকদার(২২)সহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় যুবদল কর্মী সেলিম সরদার (৪৫), আজিজুল সরদার(৪৮), শহিদুল শিকদার(৪২), আজিজুল শিকদার (১৭), তাসলিামা বেগম(৪৫)কে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে নলচিড়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল মোল্লা বলেন, ওই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার সূত্রপাত যে নারীকে নিয়ে সেই ইলমা ইয়াসমিনের স্বামী ইঞ্জিনিয়ার বেলাল সিকদার দাবি করেছেন, বিএনপি নেতা এম. জহির উদ্দিন স্বপনের ঈদ শুভেচ্ছা পোস্টার ছেড়ার কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
দাওয়াতে যাওয়ার পথে আমি দুষ্টুমি করে একটি বাঁশ পাতা ছিড়ে আমার স্ত্রীর গায়ে ছুড়ে মারি। জবাবে আমার স্ত্রী টিনের সাথে সাজানো একটি ছেড়া পোস্টারের ঝুলে থাকা অংশ তুলে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। এটি ইচ্ছাকৃত কোন পোস্টার ছেড়ার ঘটনা নয়।
ইঞ্জিনিয়ার বেলাল শিকদারের এ দাবিকে নিজেদেরকে রক্ষার কৌশল উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বিএনপির নেতা-কর্মী বলেন, ইঞ্জিনিয়ার বেলাল ও তার স্বজনরা সবাই বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের সমর্থক। এ কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা এম. জহির উদ্দিন স্বপনের পোস্টার ছিড়েছে। এছাড়া একমাত্র হারুন শিকদার বাদে তার নিজ ছেলেসহ বংশের সবাই পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দোসর। তারা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের হয়ে কাজ করে। এজন্য তাদেরকে সবাই পিজিপি (প্রেজেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি) বলে আখ্যায়িত করে। ৫ আগস্ট এর পূর্বে এরা ছিল গৌরনদীর সন্ত্রাসের গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতা হারিছ মাতুব্বরের বিশ্বস্ত সহযোগী। ৫ আগস্ট এর পরে এরা এখন সবাই বিএনপি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, খবর পেয়ে তিনি সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। একই সময় ঘটনাস্থল থেকে সোহেল মোল্লার সমর্থকদের ফেলে যাওয়া ভাঙচুরকৃত ৫টি মোটর সাইকেল জব্দ করেছেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি পুনরায় জানান, এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com