সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ৫৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠাচ্ছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। আজ-কালের মধ্যে সুপারিশগুলো পাঠানো হবে দলগুলোর কাছে। সুপারিশগুলোর প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশন বলছে, মতামত পাওয়ার পরই ৫৪টি দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা সংলাপ শুরু হবে। আর এ সংলাপের মধ্য দিয়ে আসবে নির্বাচনি রূপরেখা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো একত্র করে রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের যে মতামতগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং যা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন- মূলত সেই বিষয়ের সুপারিশগুলোই আমরা তাদের কাছে পাঠাচ্ছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সুস্পষ্ট মতামত পাওয়ার জন্য সংস্কার প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। এ প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তাদের ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকবে। তারা (দলগুলো) বলবে, এ বিষয়ের সঙ্গে একমত। না হয় বলবে, একমত নই। যেমন- সংসদের উচ্চকক্ষ থাকার বিষয়ে ‘হ্যাঁ’; অথবা ‘না’ উত্তর দেবে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে- তাও জানতে চাওয়া হবে দলগুলোর কাছে। এক্ষেত্রে এটা কি গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে? সেই বিষয় জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের সময় কি একটি গণভোট হবে? কিংবা আগে একটা গণভোট হবে? কিংবা গণপরিষদ নির্বাচন হবে? নাকি সংসদ নির্বাচন হবে? নাকি গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হবে? এ রকম কতগুলো প্রস্তাবনা দেওয়া হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এ বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আজ-কালের মধ্যে আমরা সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠাচ্ছি। আশা করছি- এক সপ্তাহের মধ্যে তারা এই উত্তর আমাদের কাছে পাঠাবে। এসব বিষয়ে তারা যদি কোনো সহায়তা চায় বা অস্পষ্টতা থাকে আমরা তা স্পষ্ট করতে প্রস্তুত রয়েছি। এই উত্তরগুলো পাওয়ার সপ্তাহখানেক পর আমাদের সঙ্গে তাদের সংলাপ হবে। এ সংলাপে সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সদস্য বলেন, যে বিষয়গুলো সংস্কারে ঐকমত্য হবে তা নিয়ে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন হবে। এটা মূলত রাজনৈতিক দল, সরকার ও অংশীজনের মধ্যে একটা স্বাক্ষরিত চুক্তি হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় যাবেন। তারা এগুলো বাস্তবায়ন করবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো আমরা পাঠাচ্ছি। এর মধ্যে থাকছে- সংসদে উচ্চকক্ষ হবে কি না? প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট হবে কি না? ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দলকে দেওয়া হবে কি না? এমন বিষয়গুলো থাকবে। তিনি বলেন, ৫৪টি দলের কাছে এই সুপারিশ পাঠানো হবে। আশা করছি প্রতিটি দলের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে সংলাপ হবে। তিনি বলেন, একটি দাবি হচ্ছে সংস্কার; আরেকটি দাবি হচ্ছে বিচার। এবং বিচার প্রক্রিয়া চলছে। আর সংলাপে যদি ঐকমত্য হয়ে যায়, এ সংস্কারগুলো হবে। তারপর নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সংলাপ শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ পাওয়া যাবে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হয়তো বা। যদিও এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমি বলতে পারি না। তবে সেই ক্ষেত্রটা (নির্বাচনি রোডম্যাপ) প্রস্তুত হবে।’ তিনি বলেন, যে দাবিগুলো রয়েছে, সেই দাবিগুলো পূরণ হলে নির্বাচনি দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে হবে।