বৃহস্পতিবার, ০৩:৫০ অপরাহ্ন, ০৬ মার্চ ২০২৫, ২১শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

অন্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনু আজীবন চেয়ারম্যান!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৫ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা প্রত্যেকে ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে ট্রাস্টের সদস্য হয়েছেন। তবে ইনু এ ফান্ডে কোনো টাকা না দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবন চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। চুক্তিপত্রের তথ্যমতে, হাসানুল হক ইনু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান থাকবেন!

তথ্যমতে, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত তৎকালীন এমপি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আলোচনা করতে যান উদ্যোক্তারা। কিন্তু ইনুর কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রাখার প্রস্তাব দেন হাসানুল হক ইনু নিজেই। পরে জটিলতা এড়াতে রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করা হয় আওয়ামী সরকারের তথ্যমন্ত্রী ইনুকে। নিজে চেয়ারম্যান হয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, স্ত্রী আফরোজা হক রিনা ও ছেলে শমিত আশফাকুল হককেও করেছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। কোনো আর্থিক অনুদান না দিয়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক বনে গেছেন ইনু ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়টি এখন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাস্টির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনুর ইশারায় ভাইস চেয়ারম্যান, ভিসিসহ অন্যরা মিলে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

হত্যা মামলায় আটক থাকায় হাসানুল হক ইনুর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিনা অর্থায়নে পরিবারের তিন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টে থাকার ব্যাপারে হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক রিনা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা আমাদের ভালোবেসেই ট্রাস্টি বোর্ডের নেতৃত্বস্থানে রেখেছেন।

তথ্যমতে, গত ১০ বছরে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় যেনতেনভাবে চলছে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের একাডেমিক কোনো রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.০০ এর নিচে নেই। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষক রয়েছেন যাদের একাডেমিক রেজাল্ট সিজিপিএ-৩ এর নিচে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ পেয়েছেন তার বিপিএড পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই। শুধু তাই নয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতার যোগ্যতা নেই এমন অনেককে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল ইসলাম। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও গত ৯ বছরেও পরিবর্তন হয়নি তার পদের। রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) লিখিত অভিযোগ করেছেন ট্রাস্টির সাত সদস্য। অভিযোগ আমলে নিয়ে এর তদন্তকাজ চলমান রেখেছে ইউজিসি।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে উপাচার্য ড. মো. শাহজাহান আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইসমত আরা খাতুনসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম করছেন। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচার ও স্বজনপ্রীতিতে ধ্বংসের মুখে পড়েছে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিধান থাকলেও ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। ইউজিসিতে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ট্রাস্টিরা বলেন, ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম তার পরিবার সংশ্লিষ্ট আটজনকে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান আলী প্রতিবেদককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় উপাচার্যের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। তবু নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ দেওয়া বোর্ড অব ট্রাস্টির ট্রেজারার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষা করতে আমরা ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে লুটেপুটে খেতে চায় তারাই এমন অভিযোগ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসেন তারা নিজেরা আর্থিক অনুদান দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডে থাকেন। কিন্তু কেউ বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা করলে এবং এর সত্যতা পেলে আমরা তদন্তসাপেক্ষে তাকে ট্রাস্টি থেকে সরিয়ে দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com